ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা পরিচয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও

স্টাফ রিপোর্টার
মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত করতে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারকে ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেখিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কলেজ সভাপতি ও মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা। প্রস্তাবিত ওই ব্যাক্তি বিগত আওয়ামী সরকারের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন মর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বহু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাস, কলেজের শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমার সাথে কথা বলে সভাপতির নাম প্রস্তাবসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়।
ইউএনও একি মিত্র চাকমা এডহক কমিটির সভাপতি পদে প্রস্তাবনা পাঠানোর আগে সদস্য সচিব ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাসের কাছ থেকে কোন ধরনের পরামর্শ নেননি, কলেজের নিজস্ব ই-মেইলের পাসওয়ার্ড জোরপূর্বক নেয়া এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রস্তাবনার খালি ফরমে স্বাক্ষর নিয়েছেন মর্মে আরও অভিযোগসহ গত ৪ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরির্দশক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের ওই কপিসহ ইউএনওর পক্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত সভাপতি মনোনয়নের জন্য প্রস্তাবনাপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সদস্য সচিবের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সদস্য সচিব সুব্রত দাস কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত যে ফরম ইউএনও’র কাছে জমা দিয়েছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়নি। ইউএনও নিজেই কলেজের ই-মেইলের পাসওয়ার্ড রেখে নিজের ইচ্ছেমত প্রস্তাবিত ফরমে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারের নাম ক্রমিক ১ এ প্রস্তাব করেন। যা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ২ নভেম্বর দুপুরে ই-মেইল চেক করে জানতে পারেন। পরদিন ৩ নভেম্বর বিকেলে দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুুমোদন হয়ে এসেছে কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি দেয়া হয়েছে প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারকে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার একজন একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ ঘরণার ব্যাক্তি। তিনি বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ওপরে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন এবং অনলাইনে টক-শোতে অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি নিজেকে বিএনপির একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি হিসেবে পরিচয় দেন।
প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকারের মতো একজন বিতর্কিত ব্যাক্তিকে কলেজের পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রস্তাব করেন। কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিতর্কিত এই ব্যাক্তিকে এডহক কমিটির সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়ে প্রস্তাবনা পত্রের দুই নম্বর ক্রমিকে থাকা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন করার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুব্রত দাসকে বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হলে তিনি ভয়ে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বক্তব্য না দিয়ে তিনি নিজ কক্ষ ত্যাগ করেন।
কলেজের অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এই কলেজের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা হলেন মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ। তিনি ছাড়া অন্য কোন ব্যাক্তি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আছেন এমন তথ্য কলেজের কোথাও নেই।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগের জন্য তিন জনের প্যানেল সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাছাড়া আওয়ামী সরকারের নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ছিলেন।
ইউএনও’র পাঠানো প্রস্তাবিত ফরমে কলেজের ‘প্রতিষ্ঠাতা সদস্য’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বিষয়টি সত্য কিনা এমন প্রশ্নে এডহক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার জানান, তিনি সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য না।
অভিযোগের বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমা বলেন, এডহক কমিটির সভাপতি প্রস্তাবনা প্রেরণের ক্ষেত্রে তিনি গোপনীয়তা রক্ষা করেছেন। তবে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সদস্য সচিবের কোন ধরনের পরামর্শ গ্রহণ না করে খালি ফরমে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলেও স্বীকার করেন।
এডহক কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সদ্যমনোনীত হওয়া ব্যক্তি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য না হওয়া সত্বেও কীভাবে সদস্য হিসেবে দেখালেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, প্রফেসর ড. এম. মেসবাহ উদ্দিন সরকার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়, এই বিষয়টি আমি জানতাম না। এটির জন্য আমি আবারো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর সংশোধনী পাঠাবো।

১৪ নভেম্বর, ২০২৪।