মতলবে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি, দেড় হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা

মাহ্ফুজ মল্লিক
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় খিদিরপুর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলেধরা সন্দেহে আমির হোসেন নামের এক মধু বিক্রেতাকে গণপিটুনির ঘটনায় গত শুক্রবার থানায় মামলা হয়েছে। মধু বিক্রেতার ছোট ভাই মো. শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে ওই এলাকার ছয়-সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও এক-দেড় হাজার লোককে আসামি করে থানায় মামলাটি করেন।
মতলব দক্ষিণ থানার ওসি একেএমএস ইকবাল জানান, গুজবের ওপর ভিত্তি করে এই গণপিটুনির ঘটনায় ঘটে। এ ঘটনায় আজ মধু বিক্রেতার ছোট ভাই মো. শাহাদাত হোসেন একটি মামলা করেন। এতে খিদিরপুর ও বাড়ৈগাঁও এলাকার মোবারক হোসেন, আমির হামজা, খোরশেদ তালুকদার, মোহন প্রধান, হুমায়ুন মৃধাও মানিক মৃধাসহ অজ্ঞাতনামা আরো এক-দেড় হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার খিদিরপুর গ্রামে এক মধু বিক্রেতাকে গণপিটুনি দেন এলাকার লোকজন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন চার ব্যক্তি। মধু বিক্রেতার বাড়ি মতলব পৌরসভার নবকলস এলাকায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে আমির হোসেন (৩৮) নামের এক মধু বিক্রেতা বালতিতে করে মধু বিক্রি করছিলেন। এ সময় কিছু শিশু সেখানে মধু খাওয়ার জন্য জড়ো হন। ওই গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মোবারক হোসেনের নাতিকেও মধু খাওয়ান আমির। এ সময় মধু খাইয়ে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে গুজব উঠে। মধু বিক্রেতাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করেন স্থানীয় লোকজন। তাকে পাকড়াও করার জন্য ওই গ্রামে মাইকিংও করা হয়। এ নিয়ে ওই মধু বিক্রেতা ও লোকজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মধু বিক্রেতাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই দেন এলাকাবাসী। এতে তিনি আহত হন।
বিষয়টি জানতে পেরে নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থলে আসেন এবং মধুবিক্রেতাকে তাঁর হেফাজতে রেখে থানায় খবর দেন। মতলব দক্ষিণ থানার ওসি এ কে এম এস ইকবালের নেতৃত্বে থানা-পুলিশের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে মধু বিক্রেতাকে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়েন। মধু বিক্রেতাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে সহায়তাকারীদেরও মারধর করেন গ্রামের লোকেরা।
এতে আহত হন ওই গ্রামের মো. রাব্বী (৭), জাকির হোসেন (৪০), সুমন হাওলাদার (৩০) ও মো. মোতালেব (৩০)। তাদের নারায়ণপুর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
মতলব দক্ষিণ থানার ওসি এ কে এম এস ইকবাল বলেন, ছেলেধরার গুজব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। আটক ব্যক্তিদের থানায় রাখা হয়েছে। পরে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

১৪ জুলাই, ২০১৯।