
স্টাফ রিপোর্টার
নারায়নগঞ্জ থেকে চাঁদপুর আসা আরো ১ যুবকের (২৬) করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। অর্থাৎ সে করোনায় আক্রান্ত। সেও মতলব উত্তরের বাসিন্দা। এ নিয়ে নারায়নগঞ্জ ফেরত ২ জনের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ হলো। তার নাম পরিচয় জানা গেলেও প্রকাশ করা হলো না। আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আক্রান্ত যুবক গত ৬ এপ্রিল তার কর্মস্থল নারায়নগঞ্জ থেকে মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে আসে।
গত ৮ এপ্রিল শরীরে জ্বর, সর্দি বা গলা ব্যথার লক্ষণ নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় সে। করোনা টেস্টের জন্য ওইদিন তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার সকালে তার রিপোর্ট প্রকাশ পায়। রিপোর্ট অনুযায়ী সে করোনায় আক্রান্ত।
আক্রান্ত যুবককে শনিবার বিকেলে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এনে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তার বাড়িসহ আশপাশের ৫টি বাড়ি লকডাউন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে লোক সংকটে তার সংস্পর্শে আসা লোকদের নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জেলায় এই প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। ৩২ বছর বয়সী ওই যুবকের পৈত্রিক বাড়ি রংপুরে। সে নারায়নগঞ্জে গার্মেন্টেসে চাকরি করতো। সেখানে থাকা অবস্থায় সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত ৫ এপ্রিল জ্বর নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলায় তার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসে সে।
সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে গত ৬ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ বলে জানা যায়।
এই রিপোর্ট আসার দিনেই চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার সংস্পর্শে আসা ১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে করোনা টেস্টের জন্য। একই ওয়ার্ডে তার স্ত্রীকেও ভর্তি রাখা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার শ্বশুর বাড়ি ও আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে চাঁদপুর জেলার ৪জন আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সূত্রে জানা গেছে। আইইডিসিআর’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে এই ফলাফল বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।
তবে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ২জন আক্রান্তের কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে একজন গত বৃহস্পতিবার সনাক্ত হয়েছে এবং অপরজন শনিবার। এই দু’জন মতলব উত্তরে অবস্থান করছিলেন। বর্তমানে দু’জনেই মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে চাঁদপুরে আইসোলেশন থাকা ১ জন করোনায় আক্রান্ত বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাস পেলেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তারা বলছে, এ সংক্রান্ত রিপোর্ট আসেনি।
শনিবার রাতে কুমিল্লার গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৬জন করোনায় আক্রান্ত হলেও আইইডিসিআর’র ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে ৮জন। এ ব্যাপারের কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগ আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করে জানতে পারেন কুমিল্লার বাসিন্দা ২জন ঢাকায় নমুনা পরীক্ষা করে জেনেছেন তারা করোনায় আক্রান্ত। ওই দু’জনের ঠিকানা ‘কুমিল্লা’ উল্লেখ করায় কুমিল্লায় মোট আক্রান্ত দেখানো হচ্ছে ৮জন। অর্থাৎ কুমিল্লা জেলার ৮জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত।
আইইডিসিআর’র ওয়েবসাইটে ৪ জন আক্রান্তের উল্লেখ থাকা সম্পর্কে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহর বক্তব্য জানার জন্য শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত চাঁদপুরে ২জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন। ৪ জনের বিষয় আমি নিশ্চিত নই। পরে কুমিল্লার ঘটনাটি চাঁদপুরের সিভিল সার্জনকে অবহিত করলে তিনি বলেন, আমি জেনেছি মতলব উত্তরের একজন নারী করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হয়তো স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর উল্লেখ করায় তিনিও চাঁদপুরের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই তিনজনের বাইরে আমার কাছে আর কোনো আক্রান্তের তথ্য নেই।