মতলব উত্তরে গ্রামীণ জনপদের স্বাস্থ্যসেবায় ৩৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

মনিরুল ইসলাম মনির
মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ছেংগারচর পৌরসভার প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। যা স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অসামান্য অবদান রেখে চলছে।
বর্তমান সরকার সবার জন্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কাজ করছে। বিশেষ করে পল্লীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতি ৬ হাজার হতদরিদ্র ও অসহায় সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রধান ভ‚মিকা রাখছে।
প্রতিদিন ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এটি খোলা রেখে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে একজন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য কর্মী ও একজন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্যে প্রতি ৩ মাস অন্তর-অন্তর ২ কার্টুন ঔষধ ঢাকা থেকে উপজেলায় প্রেরণ করা হয়। যা রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক একটি। পল্লীর জনগোষ্ঠীর কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সফলতা অর্জন করছে। ক্লিনিকগুলোতে আন্তরিক পরিবেশে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত করছে। চালুকৃত প্রতিটি ক্লিনিকে দৈনিক গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে সাধারণ রোগী সেবা, বাচ্চাদের শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সেবা, গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারী সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা রয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে মাসে দু’বার ৩০ প্রকারের ওষুধ দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা রাখতে নির্দেশ রয়েছে।
জাতীয়ভাবে ঘোষিত চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও ছেংগারচর পৌরসভার যেখানে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল নেই ও অর্ধ-ঘন্টার মধ্যে একজন গর্ভবতী মা খুব স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে আসতে পারে এমন স্থানে প্রতি ৬ হাজার পল্লী এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পর ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে চালু রয়েছে। চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ৩৩ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইটার কর্মরত রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- মতলব উত্তরে বর্তমানে ৪৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে ও কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার ৩৩ জন কর্মরত আছেন।
এসব ক্লিনিকগুলোতে পল্লী এলাকার জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক। এসব ক্লিনিকগুলোতে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ১৬ সহ¯্রাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে।
প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ সহ¯্রাধিক শিশু, কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী মা ও তার, সন্তান প্রসবকালীন সময় ও পরে, নবজাতক শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে। কোনো কোনো জটিল রোগীকে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স কিংবা ঢাকায় রেফার করে থাকে।
আর্সেনিক আক্রান্ত, সর্দি, কাশি, আমাশয়, ডায়রিয়া, এ্যাজমা, কীটপতেঙ্গের কামড়ের চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামশ, কাশি, চুলকানি, দুর্বলতা, স্বাভাবিক ডেলিভারী, গ্রাস্টিক, আলসার, রক্তশূন্যতা বা স্বল্পতা প্রভৃতি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানই কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান কাজ প্রভৃতি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা পাচ্ছে।
এ ছাড়াও জাতীয় টিকাদান কর্মস‚চিসহ ৬টি অত্যাবশকীয় টিকা প্রদান করা হয়। এখানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মী ও ৩৩ জন হেলথ প্রোভাইডর নিয়োজিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সারা দেশব্যাপী পল্লী এলাকায় প্রতি ৬ হাজার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বারান্দাসহ ৬ শত্যাংশ ভ‚মির ওপর একটি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল বা কলসহ ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জমিদাতা ও স্থানীয় পর্যায়ের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সার্বিক পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছে।
২০০০-০১ অর্থবছর পর্যন্ত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করার পরে সরকার পরিবর্তনের ফলে বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ ভেস্তে যায়।
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ শেষে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সে সময়ে মতলব উত্তর উপজেলায় ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের প্রস্তাব স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো ৩৩টি।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, পল্লীর জনগোষ্ঠীর জন্যে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় সফলতা অর্জন হচ্ছে। প্রতিটি ক্লিনিকে সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ একজন করে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইটার নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা প্রাথমিক শিক্ষার স্বার্থে ব্যবস্থাপত্র লিখতেও পারবে। জটিল রোগীদের বেলায় তারা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার করবে।

১৭ জানুয়ারি, ২০২৩।