মতলব উত্তরে চালের চেয়ে আটার দাম বেশি

ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের প্রভাব

মনিরুল ইসলাম মনির
মতলব উত্তরের বিভিন্ন বাজারে চালের দামের তুলনায় আটার দর রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক কেজি খোলা আটা ৬৪ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। গ্রামের হাটবাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এক কেজি চালের দামে এখন আর আটা মিলছে না। বাজারে ৫৬ টাকায় এক কেজি মোটা চাল মিললেও আটা কিনতে হচ্ছে ৬৪ টাকায়। অথচ চার মাস আগেও ৪০-৪২ টাকায় এক কেজি আটা পাওয়া যেত। সে সময় এক কেজি মোটা চালের দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
বাজারে চালের দামের তুলনায় আটার দামের ব্যবধান থাকত কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সেই চিরচেনা বাজার দরের চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে আটার দামের চেয়ে সস্তায় পাওয়া যায় চাল। গত সোমবার মতলব উত্তরের ছেংগারচর চাল বাজার ও মুদিবাজার ঘুরে চাল-আটার দামের এমন বৈপরীত চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে, গত বছর থেকে চালের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে শ্রমজীবী ও সাধারণ আয়ের পরিবারের খাবারে ঠাঁই করে নেয় স্বল্পমূল্যের আটা। বেশিরভাগ পরিবারে তিন বেলার খাবারে রুটিই থাকত দুই বেলা। তবে হঠাৎ আটার অস্থির বাজারে সেই চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। দেশে গমের সংকটের কারণে আটার দাম দফায় দফায় বেড়ে প্রতি কেজি ৬৪ টাকায় উঠেছে। শহরের পাড়া-মহল্লার দোকানে এবং গ্রামের হাটবাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়।
আটার তুলনায় বাজারে এখন কম দামে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। বাজারে মোটা চাল ৫৬ টাকায় পাওয়া গেলেও এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না আটা। বর্তমান বাজারে এক কেজি খোলা আটা ৬৪ টাকা এবং এক কেজি প্যাকেট আটা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে বাজারে মোটা চালের কেজি ৫৬ টাকা এবং বেশি বিক্রীত বিআর-২৮ জাতের চাল ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
ছেংগারচর বাজারের চাল মার্কেটে চাল কিনতে আসা রিক্সা চালক মো. জয়নুল বলেন, আগে কম দরে আটা কিনে পরিবারে দুই বেলা খাওয়া হতো। বর্তমান বাজারে আটার চেয়ে চালের দামই কম। এখন আটার বদলে তিন বেলা ভাত খাচ্ছি। আটা এখন গরিবের হাতের নাগালে নেই। আমাদের আয় বাড়েনি, রিকশা ভাড়া আগের মতোই আছে। কিন্তু দিন দিন সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের মতো মানুষের বাঁচা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে খুচরা চাল-আটা ব্যবসায়ীরা জানান- চালের দাম চড়া হলেও নতুন করে দাম বাড়েনি, স্থির রয়েছে। তবে লাগামহীনভাবে আটার দাম বেড়ে বর্তমানে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে উচ্চমূল্যে আটা কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব খুচরা পর্যায়ে পড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণে আটার বিক্রি সিকিভাগে নেমে এসেছে। আটার বড় ক্রেতা সাধারণ মানুষ, তারা এখন কিনছে না তেমন।
রেকর্ড পরিমাণ চালের মজুদ আছে সরকারের গুদামেও। এরপরও সহনীয় পর্যায়ে আসছে না দাম। বিশাল শুল্কছাড়ের সুবিধায় ভারত থেকে চাল এলেও, পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই খুচরা বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শর্ত লঙ্ঘন করে অনেক প্রতিষ্ঠান, আমদানি করা চাল নিজেদের ব্র্যান্ডে প্যাকেট করে বিক্রি করছে।
চালের পাশাপাশি, অস্থিরতা চলছে আটা-ময়দার বাজারেও। প্রতি কেজি খোলা আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ টাকায়। আর প্যাকেটজাতের জন্য গুণতে হবে ৫ টাকা বেশি করে। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার মাত্র এক চতুর্থাংশ পণ্য সরবরাহ করছেন মিলাররা। ব্যবসায়ী আশঙ্কা, গমের আমদানি বৃদ্ধি করা না গেলে, আটা-ময়দার বাজারে আরো বড় সংকট দেখা দিতে পারে।

২৪ নভেম্বর, ২০২২।