মাছ ধরার সরঞ্জাম বিক্রির ধুম

মনিরুল ইসলাম মনির
ঋতুচক্রে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। নদ-নদীতে নতুন পানি এসে গেছে। ঐ পানি মতলব উত্তরের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে নদী হয়ে। বর্ষার শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এবার একটু আগেই খালবিল, ডোবা-জলাশয়-পুকুরে পানি জমতে শুরু করেছে। তাই মতলব উত্তরের বিভিন্ন হাটে ছোট মাছ ধরার সরঞ্জাম বেচাকেনারও আগাম ধুম পড়েছে।
সরেজমিনে মাছ ধরার সরঞ্জাম বিক্রির সবচেয়ে সটাকি বাজারে গেলে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মেহের আলী বলেন, বর্ষা আসছে। একোনি তো মানুষ খাদুন কিনবি। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিত পানি বাড়বে, ডিমওয়ালা মাছও পাওয়া যাবে। আর জমির আইল ক্যাটে পানির সোতের মুখি খৈলসুসি, খাদুন ও ধুন্দি লাগালিই মাছ পাওয়া যাবি। ইবার ভালোই জমে উঠিছে বিচাকিনা। আমাগো মাছ ধরার যন্ত্ররপাতি ইবার ভালোই চলতিচে। দামও বাড়তিচে।
মতলব উত্তর উপজেলার বোরোচর গ্রামের ইব্রাহিম গাজী বলেন, দাম ভালোই উটিচে। যতো বৃষ্টি হবি তত দাম বাড়বি। চরওমেদ গ্রামের সুমন বলেন, খাজনা আর বাজনা দিতিই আমাগারে লাভ শেষ। তারপর বাঁশ সুতলির যে দাম বাড়িচে তাতি কেবল আমাগারে মজুরিডাই থাকতিচে।
এ সময় চরাঞ্চলের জমির আলী, ওমর আলী, রাহাত, রায়হান, মজেনা, ফরিদা ও আনোয়ারা জানান, সারা বছরই এসব মাছ ধরার সরঞ্জাম বানানো ও বিক্রি হয়। তবে বর্ষায় বেশি হয়। আর এসবই ছোট মাছ ধরার। নানা রকম নাম মাছ ধরার এ সব সরঞ্জামের। যেমন খৈলশুনী, ধুন্দি, বৃত্তি, ছোট খাদুন/বড় খাদুন ইত্যাদি।
তারা জানান, এসব বানাতে বাঁশ, তালের প্যাখের আঁশ, লৈ (জঙ্গলের এক ধরনের লতা), দড়ি ও পাটের সুতলি লাগে। নারী-পুরুষ মিলে তারা এসব বানান বলে জানান। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে এই হাট থেকে কিনে নিয়ে যায় মাছ ধরার এসব সরঞ্জাম।
সাহেব আলী বলেন, একটা খৈলশুনী তৈরিতে মজুরি ধরে ৩৫০ টাকা পড়ে, বিক্রি হয় ৪০০-৪২৫ টাকায়, ধুন্দি খরচ ১৫০, বিক্রি হয় ২০০, বৃত্তি ৩৫০টাকা খরচ, বিক্রি ৪০০-৪৫০ আর বড়খাদুন ৩০০ টাকা খরচ, বিক্রি হয় ৩৫০-৪০০ টাকা।
সফর আলী বলেন, আমাদের মজুরি ধরলে খুব লাভ হয় না। তবে এটা আমাদের পেশা তাই বউ-বিটি নিয়ে বানানো হয়। মরিয়ম খাতুন বলেন, আগে আমরাই কেবল এ কাজ করতাম। এখন গেরস্থরাও করে। তাই আমাদের সমস্যা বাড়ছে। তবে আমারে জিনিসির কদরই বেশি।
১৪ জুলাই, ২০২১।