মনিরুল ইসলাম মনির
নির্মাণের তিন দশক পেরিয়ে গেলেও খনন করা হয়নি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত মতলব উত্তরের ছোট বড় প্রায় ৫৬১ কিলোমিটার খাল। বিধায় গত দুই দিনের অতি বৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের মতলব উত্তর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে সড়ক। অলিগলি-বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। সড়কে আটকা পড়েছে যানবাহন। চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। প্রবল বর্ষণে দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতায় ফের ভোগান্তিতে পড়েছেন মতলব উত্তর উপজেলার মানুষ।
শনিবার ও রোববার রাতে মতলব উত্তর উপজেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানিতে মতলব উত্তর উপজেলাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন বিলের ফসলি জমি, মৎস্য প্রজেক্ট, বনায়ন প্রকল্প, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে হাটু পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় পানি ওঠার কারণে শত-শত পরিবার পানিতে আটকা পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্পের বিলগুলোতে রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সেচ খালগুলো বন্ধ থাকায় পানি টানতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
দুই দিনের অতি বৃষ্টির কারণে উপজেলার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ, এমনকি ছোট-ছোট খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করায় বৃষ্টি হলেই সেচ প্রকল্প জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এজন্য আশপাশের নালা-খালগুলো পরিষ্কার করে ফেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন খাল দীর্ঘদিন থেকে খনন না করার কারণে পুরো বিলে জলবদ্ধতা সৃষ্টিসহ তালতলী, ঝিনাইয়া, ঠাকুরচর, ঘনিয়ারপাড়, ওটারচর, পাঁচআনী, মাথাভাঙা, হানিরপাড়, লতুরদি, নাউরী, আমিয়াপুর, সাদুল্লাপুর, দুর্গাপুর, জীবগাঁও, কালিপুর, মিঠুরকান্দি, ব্রাহ্মণচক, সুজাতপুর, কৃষ্ণপুর, নয়াকান্দি কমপক্ষে ৪০টি বিল ডুবে গেছে।
মতলব উত্তর উপজেলার আশর্^াদ প্রধান জানান, অতিবৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ফরাজীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দানেশ জানান, দুই দিনে যে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে তাতে চারিদিকে পানি থৈ-থৈ করছে। বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজারও পরিবার।
মেঘনা ধনাগোদা পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার আলাউদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং কিছু লোক সরকারি খাল ও ক্যানেল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টি আসলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরীফুল হাসান জানান, বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১।