বরই বিক্রেতা সেজে
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. সুলতান মিয়া (৬৫)। সাজা এড়াতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কুমিল্লা জেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার এলাকায়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ওই এলাকায় ছদ্মবেশে আসা-যাওয়া শুরু করেন হাজীগঞ্জ থানার এসআই মো. নাজিম উদ্দিন।
তিনি আসামিকে ধরতে সখ্যতা গড়ে তোলেন ওই এলাকার অটোরিক্সা চালক ও হকারদের সাথে। হয়েছেন কখনো অটোরিক্সার হেলপার, আবার কখনো চালক। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে তিনি সুলতান মিয়াকে ধরতে ব্যর্থ হলেও তার অবস্থান মোটামুটি নিশ্চিত করেছেন। পরে ওই এলাকায় তিনি ফুটপাতে বসে হকারি করে বরই বিক্রি শুরু করেন।
অবশেষে আসে সফলতা। সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে ওই এলাকায় থেকে সুলতান মিয়াকে আটক করতে সক্ষম হন হাজীগঞ্জ থানার এসআই নাজিম উদ্দিন। মো. সুলতান মিয়া হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ রামরা (আহমেদাবাদ) গ্রামের গাবতলী বাজার এলাকার মিজি বাড়ীর মৃত আরব আলীর ছেলে।
জানা গেছে, সুলতান মিয়া ২০০৯ মাদক নিয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর তিনি জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যান। তার অনুপস্থিতিতে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ সালের ১৯ (১) এর ৩ (খ) ধারায় অভিযুক্ত হওয়ায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমান করেন।
পরবর্তীতে তিনি আদালতে আত্মসমর্পন না করায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এভাবে কেটে যায় ১৫ বছর। তিনি কুমিল্লার জগন্নাথপুরে বর্ডার এলাকায় বিয়ে ও বাড়ি করায় তাকে গ্রেফতার করাটা ছিল দুরুহ। ওই এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই তিনি পালিয়ে যেতেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, পুলিশের কৌশলের কাছে তাকে হার মানতেই হলো। সোমবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে এসআই মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুলতান মিয়াকে আটক করতে তার নিজ বাড়ি রাজারগাঁওয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখি। কিন্তু তিনি বাড়িতে না আসায় এবং স্ত্রী-সন্তানদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না রাখায় তাকে ধরতে পারিনি। তবে জানতে পারি, তিনি কুমিল্লার জগন্নাথপুর এলাকায় আরও একটি বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
তিনি আরও বলেন, তার অবস্থান জানার পর কয়েকবার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারিনি। কারণ, পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই তিনি পালিয়ে যেতেন। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই এলাকায় অবস্থান করে ছদ্মবেশ নেই। কখনো গাড়ীর হেলপার, কখনো ড্রাইভার সেজে মোটামুটি তার অবস্থান নিশ্চিত করি। এরপর ফুটপাতে বসে হকারি করে বরই বিক্রি করি। একপর্যায়ে সোমবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী সুলতান মিয়া খুব চালাক। তিনি নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। ফলে ম্যানুয়ালি চেস্টা করে তার লোকেশন নিশ্চিত করি। এরপর নানা কৌশল অবলম্বন করে এবং কুমিল্লা সদর থানা পুলিশের সহযোগিতা আমরা তাকে আটক করতে সক্ষম হই। আজ মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে তিনি জানান।
১২ মার্চ, ২০২৪।