হাজীগঞ্জ আমিন মেমোরিয়াল উবির শিক্ষার্থী
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মারুফ হোসেন রিয়াদ (১৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. ফারুক হোসেনসহ ৪ জন কারাগারে এবং ৫ জন জামিনে আছেন। এখনো পলাতক রয়েছে মামলার ৩ নম্বর আসামি মো. রাশেদ। তাকে আটক করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন নিহতের পরিবার।
তবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি ফারুক হোসেন (২৮)। তিনি কচুয়া উপজেলার দক্ষিণ সহেদেবপুর ইউনিয়নের মালচোঁয়া গ্রামের বড় পাটোয়ারী গ্রামের মৃত জিন্নত আলী ওরফে জিতু মিয়ার ছেলে। গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতের কোন এক সময়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় মারুফ হোসেন রিয়াদ এবং রোববার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রিয়াদের বাবা মো. ফারুক হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জানুয়ারি হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-২৫) দায়ের করেন। মামলায় ৫ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে ২০ জানুয়ারি পুলিশ নামীয় আসামি এবং সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজনসহ মোট ৮ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে।
তারা হলেন- নামীয় আসামি হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মকিমাবাদ গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে শাকিল (১৮), মৃত মোর্শেদ আলীর ছেলে মো. ফরিদ মিয়া (৫০) ও কিশোরগঞ্জ জেলার তারাইল উপজেলার শিমুল আটি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মো. নুরুল আমিন ওরফে সুলতান (৩২)।
সন্দিগ্ধ আসামি হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন আলী আজ্জমের ছেলে মো. আবুল কাশেম (১৯), মুকবুল হোসেন মুকবুলের ছেলে মো. রাকিব হোসেন ওরফে রাকিব (১৮), মোস্তফা কামালের ছেলে মো. শাকিব হোসেন ওরফে শাকিব, মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. আলামিন রাব্বি (২১) ও মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রাকিব (২০)।
এরপর ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মামলার প্রধান আসামি মো. ফারুক হোসেনকে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন গাজীপুরা নামক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরবর্তীতে তাকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক হোসেন দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
গ্রেপ্তারকৃত ৯ আসামির মধ্যে জামিনে আছেন- মো. রাকিব হোসেন ওরফে রাকিব, মো. আলামিন রাব্বি, মো. শাকিব হোসেন ওরফে শাকিব, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রাকিব (২০) ও মো. আবুল কাশেম। কারাগারে আছেন- মো. ফারুক হোসেন, শাকিল, মো. নুরুল আমিন ওরফে সুলতান ও মো. ফরিদ মিয়া।
এদিকে ফারুক হোসেন তার জবানবন্দীতে জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার মারুফ হোসেনের উপর কয়েকটি কারণে ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত ছিলো সে। গত ১৮ জানুয়ারি দুপুরে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাকে চড়Ñথাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারে রিয়াদ। তিনিও তাকে চড়-থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারেন।
এরপর পুরি বানানোর বেলুন দিয়ে রিয়াদ তাকে (ফারুক হোসেন) ঘাড়ে বারি মারে (আঘাত করে)। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি দিয়ে রিয়াদের পেটে এবং পরবর্তীতে ঘাড়ে (গলায়) ঘাই মারলে রিয়াদ মারা যায় এবং পরের দিন ভোরবেলা সে ভয়ে পালিয়ে যায়।
এ মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মামলার বাদী ও রিয়াদের বাবা ফারুক হোসেন বলেন, মামলার ৩ নম্বর আসামি রাশেদ শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে। ইতোমধ্যে তার মা বসতঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। রাশেদকে গ্রেপ্তার করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কারণ এর আগেও রাশেদ প্রকাশ্যে কয়েকবার রিয়াদকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলো বলে তিনি জানান।
ফারুক হোসেন আরো বলেন, আমি হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআইসহ সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের (হত্যাকারী) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তবে নিরাপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ মো. নূর হোসেন মামুন জানান, রিয়াদ হত্যা মামলাটি তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু বিষয়ে এখনো তদন্ত কাজ চলছে। এই কাজগুলো শেষ হলেই চার্জশীট দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের শিকার মারুফ হোসেন রিয়াদ পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডের মকিমাবাদ গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে। সে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির (ভোকেশনাল শাখা) শিক্ষার্থী ছিলো। সে তার বাবা-মায়ের সাথে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া গ্রামে নতুন বাড়িতে থাকতো।
গত ১৯ জানুয়ারি পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডের আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ফরিদের পুরির দোকান থেকে মারুফ হোসেন রিয়াদের পেট এবং গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।