লকডাউন মানছে না হাজীগঞ্জবাসী

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
মহামারী করোনার সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিকরণে নির্দেশনা দেয় সরকার এবং চাঁদপুর জেলায় প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১০ মে সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল শপিং মল, বিপণী বিতান, মার্কেট, দোকান-পাট, ব্যবসা কেন্দ্র আবশ্যিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে সংক্রামক ঝুঁকি মোকাবেলায় গত ৯ এপিল চাঁদপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের পাশাপাশি নিয়মিত চলছে প্রশাসনের অভিযান, সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশের টহল এবং জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জরুরি কাজ ছাড়া বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা মানছে না হাজীগঞ্জবাসী।
সরকারি নির্দেশনা ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক লকডাউনের মাঝে গত কয়েকদিনে হাজীগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। খুলে গেছে বিপণী বিতান, মার্কেট ও দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চলছে রিকশা, অটোরিকশাসহ প্রায় সব ধরনের যানবাহন। হচ্ছে জনসমাগম এবং এই জনসমাগমের কারণে সড়কে দেখা গেছে যানজট।
গতকাল বুধবার হাজীগঞ্জ বাজারে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এই চিত্র দেখা গেছে। বাজারের অলি-গলিতে এবং বিপণী বিতান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের মাঝে নেই ন্যূনতম সচেতনতা। অধিকাংশ দোকানে নেই জীবাণুনাশক কোন কার্যক্রম। লকডাউনের মধ্যে শহরের এমন চিত্র দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত কয়েকদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা হরদম। এতোদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় (খাদ্য) পণ্য ও ঔষুধ ছাড়া অন্যান্য দোকানগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের লুকোচুরির মাধ্যমে বিকি-কিনি হতো। কিন্তু গত ১০ মে থেকে খুলে গেছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চলছে প্রায় সব ধরনের যানবাহন। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা।
এমনকি ব্যবসায়ীরাও তাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত মানছেন না। গত ১০ মে থেকে হাজীগঞ্জ বাজারের সব শপিংমল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানান দেন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি। কিন্তু ফলাফল উল্টো। ওইদিন থেকেই বাজারের মার্কেটগুলোসহ প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেখা গেছে।
এ নিয়ে পুলিশের সাথে ব্যবসায়ীদের বাক-বিতন্ডা করতে দেখা গেছে। আবার কয়েকটি দোকানে সামাজিক দূরত্ব মানা না মানা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝেও বাক-বিতন্ডা হচ্ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? সবাই আপন গতিতে চলছেন। কেউ বিক্রি করছেন, কেউ কিনছেন। এ যেন বিধি-নিষেধ না মানার প্রতিযোগিতা চলছে। যার ফলে করোনা সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকির আশংকা করছেন সচেতনমহল।
বাজারের কয়েকজন অভিজাত ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন অভিজাত ব্যবসায়ী জানান, আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। কিন্তু অন্য ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রেখেছেন। যার ফলে আমাদের নিয়মিত কাস্টমার (ক্রেতা) হারাচ্ছি। তাছাড়া লকডাউনের কারণে এমনিতেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর আবার কাস্টমার হারাচ্ছি। তাই দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কেউ দোকান খোলা রাখবে, কারো বন্ধ থাকবে। তা কি করে হয়? বন্ধ থাকলে সবার দোকান বন্ধ, খোলা থাকলে সবারটা খোলা। স্বাস্থ্য বিধি ও শারীরিক দূরত্বের বিষয়ে এই ব্যবসায়ীরা বলেন, কাস্টমার মানতে চায় না। যতই তাদের বলি, কোন কাজ হয় না।
হাজীগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চুন্নু বলেন, করোনা আক্রান্তে জেলায় চারজন মারা গেছেন। এর মধ্যে হাজীগঞ্জের একজন এবং বর্তমানে আক্রান্ত আছেন চারজন। এরপরও লোকজনের মাঝে সচেতনতা নেই। তিনি বলেন, এই জনসমাগমের কারণে করোনা ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাই প্রত্যককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
রমজান উপলক্ষে বাজার করতে আসা খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি জানান, বাজারে সেনাবাহিনী ও পুলিশ থাকার পরও মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষের সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসনের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এইচ.এম সোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, জনসমাগম বাড়লে করোনা ঝুঁকিও বাড়বে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা না গেলে ঝুঁকি থেকে যাবে। যে কোনভাবেই হোক স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

১৪ মে, ২০২০।