লাভের আশায় আগাম আলু তুলছেন চাষিরা

* আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে।
* আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন।
* চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জিত জেলা।

মনিরুল ইসলাম মনির
চাঁদপুরে এ বছর আলুর বাজার শুরু থেকেই চড়া। দাম বাড়তে বাড়তে এখন পুরোনো আলু খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু বিক্রি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে শুরু হলেও বাজার দর এখন ৩৫-৪০ টাকা। তাই লাভের আশায় আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন চাঁদপুরের ৪ উপজেলার আলু চাষিরা।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ খেতজুড়ে আলু আর আলু। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে খেত থেকে আলু তুলছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বেশি লাভের আশায় ট্রাকে করে আলু নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে।
এ জেলায় আলু রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রায় ২ সপ্তাহ আগে থেকে আলু ওঠা শুরু হয়েছে।
দেওয়ানজি কান্দি গ্রামের মমিন বলেন, আমি এ বছর দুই বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। এর মধ্যে এক বিঘায় ছিল আগাম জাতের। ৩০ সেপ্টেম্বর আলু লাগানোর পর ৫৬ দিনের মাথায় আলু তুললাম। আলু হয়েছে ১৮ বস্তা। ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো পাওয়ার আশায় তুলেছি। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনতে চান। আমি আরও বেশি দামের আশায় যাত্রাবাড়ি আড়তে আলু পাঠিয়েছি।
একই গ্রামের শামিম হোসেন বলেন, আমি ১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু করেছি। স্থানীয় বাজারে দাম থাকায় এখানেই আমি আলু বিক্রি করেছি।
আলু ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এলাকার কৃষকদের কাছে আলু কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছি। আমাদের ট্রাক যাচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ি আড়তে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্রমতে, চাঁদপুরে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, রোমান, বারী-১, বারী-১০, গ্রানোলা, সাগিটা-৭ এবং স্থানীয় সাইটা, লাল পাটনাই, লাল পাখরি, শিল বিলাতি, ঝাউ বিলাতিসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়। এখন সাগিটা-৭ জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণ হয়েছে।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে চাঁদপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন এবং চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার হেক্টর।
আলু চাষিরা চলতি বছরে জেলায় ব্যাপক আলু চাষাবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এবারে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় প্রাথমিকভাবে চাষাবাদকৃত আলু রোপণের সময় কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আগামি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে আগাম এই চাষ প্রক্রিয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে এবার ১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ১০ মেট্রিক টন। মতলব উত্তরে ৬২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬৬ হাজার মেট্রিক টন।
হাজীগঞ্জে ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৫০ মেট্রিক টন। কচুয়ায় ২ হাজার ০৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। ফরিদগঞ্জে ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। হাইমচরে ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন।
চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জিত জেলা। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের স্থান। চাঁদপুরের জলবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা, ডাকাতিয়া, মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙনগ্রস্ত, নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি।
জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, চলতি বছর এ জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি লাভের আশায় আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছে চাষিরা। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম আলু ওঠা শুরু হয়েছে।
১০ জানুয়ারি, ২০২১।