
নোমান হোসেন আখন্দ
শাহরাস্তির গৃহবধূ মেহজাবিন সুলতানা ইতির লাশ দাফনের ১ বছর ৭ মাস ১২ দিন পর তাদের পারিবারিক কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট সেলিনা আক্তার গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় শাহরাস্তি পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ডের ঘুঘুশাল গ্রামের কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় বিয়ের ২ মাস ১৮ দিনের মাথায় স্বামীর বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা মজুমদার বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় পৌরসভাধীন ঘুঘুশাল গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে মেহজাবিন সুলতানা ইতির। ওই ঘটনায় ২৪ জুন শাহরাস্তি থানায় ১টি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে নিহতের ভাই নুরে আলম বাদী হয়ে ৪ জনকে বিবাদী করে শাহরাস্তি থানায় ১টি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নিয়ে আসামিদের বিভিন্ন মহলে দৌঁড়-ঝাপ ও গোপন সমঝোতার আভাস পেলে বাদী মামলাটির বিষয়ে আদালতে আপত্তি জানান। ওই বছরের ৫ জুলাই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বদলি করা হয়।
সেখানকার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) এম এ রউফ খান হত্যার বিষয়টি মিথ্যা বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাদীর অনাস্থার ভিত্তিতে আদালত ২০১৯ সালের ২৭ মে সিআইডি চাঁদপুরকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। তদন্ত চলাকালে ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় গ্রাম হতে ইতির স্বামী ইকরামুল হক রাজুকে শাহরাস্তি থানার সহযোগিতায় আটক করা হয়। ৩১ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান সরকারকে পরিবর্তন করে পুলিশ পরিদর্শক ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামকে দেয়া হয়। বার-বার মামলার কার্যক্রম পরিবর্তনে বোন হত্যার বিচার চেয়ে হতাশ নুরে আলম শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের স্মরণাপন্ন হন এবং একটি লিখিত আবেদন করেন। সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে ১৪ নভেম্বর সিআইডির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আবদুল মান্নানকে তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিনের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ২৪ নভেম্বর ইতির স্বামী ইকরামুল হক রাজুর রিমান্ড মঞ্জুর ও কবর হতে লাশ উত্তোলনপূর্বক পুনঃময়নাতদন্তের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আবেদন করেন। আদালত জেল গেটে ৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ইতি হত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। পরবর্তীতে চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আযমের আদালতে ফৌ.কা.বি.১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাজু জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে এসে ইতির সাথে কথা বলি। কথা বলার একপর্যায়ে আমার সাথে তার বাক-বিতন্ডা হয়। আমি রাগের বশবর্তী হয়ে তার গলায় চাপ দিলে তার শ^াস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দিশেহারা হয়ে কোন উপায় না দেখে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের (ইতির) বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের (ইতির) বাড়ির সদস্যেদের বলি, ইতি অসুস্থ। আপনারা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে আমি রাগের বশে তার গলা চেপে ধরি। আমি বুঝতে পারিনি সে মরে যাবে। পরবর্তীতে গত ১৬ জানুয়ারি চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহম্মদ জামাল হোসেন মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য কবর হতে নিহত ইতির লাশ উত্তোলন করে পুনঃময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
লাশ উত্তোলনকালে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা আক্তার, সিআইডির ইন্সপেক্টর আবদুল মান্নান, শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক আবদুল আউয়াল, মোস্তফা কামাল, সাংবাদিকবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।