মাটি কাটার মহোৎসব থামছে না
স্টাফ রিপোর্টার
শাহরাস্তি উপজেলায় কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব থামছে না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমিদস্যুরা কৃষি জমির মাটি দখলে নিয়েছে। মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে, দিনের পরিবর্তে রাতে মাটি কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ভেকু মেশিনের সাহায্যে তারা কৃষি জমির মাটি কেটে আইসার, ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরের সাহায্যে মাটিগুলো নিয়ে যায় বিভিন্ন ইটভাটায়। এছাড়া কৃষি মাঠের মাঝখানে বড় বড় মাছের ঘের, বসতবাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এসব কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ায় উল্লেখযোগ্যহারে ধান উৎপাদনকৃত শত-শত একর কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষক ও জমির মালিকরা জানায়, একশ্রেণির মাটি খেকো দালালরা কৃষি মাঠের মাঝখানে ২/১ জন জমির মালিককে মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নেয়। অত্যাধুনিক ভেকু মেশিনের সাহায্যে এসব কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ায় জমিগুলো বড় বড় গর্তে পরিণত হয়। মাটিখেকো দালালরা পার্শ^বর্তী জমির মালিকদের বলে, আপনারা এ জমির সমভাবে মাটি না কাটলে কৃষি জমির পানি থাকবে না, ফসল উৎপাদন হবে না। সমানভাবে মাটি কাটার হিড়িকে একে একে সব কৃষি জমির মালিক তাদের কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে ফসলি কৃষি জমিগুলো ধ্বংস করছে।
শাহরাস্তি উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় শতাধিক কৃষি মাঠে মাটিখেকো দালালরা ভেকু মেশিন, টাক্ট্রর ও আইসার গাড়ির সাহায্যে কৃষি জমি নিধন অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দেখার যেন কেউ নেই, মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকলেও বর্তমানে অভিযান পরিচালনা বন্ধ রয়েছে। মাটি খেকো দালালদের কৃষি জমির মাটি কাটা নিধন কমছে না।
এদিকে কৃষি মাঠ থেকে মাটি নিয়ে রাস্তায় উঠার জন্য, এসব মাটি খেকো দালালরা গ্রামীণ সড়ক কেটে ড্রাইব্রেশন করে গ্রামীণ জনপদের রাস্তাগুলো ধ্বংস করছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দকৃত গ্রামীণ জনপদের এ সড়কগুলো মাটি খেকো দালালদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ সড়কের বেহাল দশার কারণে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব কৃষি জমির মাটি পারাপারে মাটি খেকো দালালরা সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ট্রাক্টর ও যন্ত্রদানব আইসার ব্যবহারে সড়কে ধুলাবালি, ভযাবহ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কৃষি জমির মাটি কেনা কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, কৃষি জমিগুলো ধান ক্ষেতের জন্য উপযোগী না হয়ে, বেশি উঁচু হয়ে যাওয়ায় জমির মালিকরা আমাদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করছেন। পরবর্তী বৎসর ফসল করতে পারছেন, কিছু টাকাও পেলেন। তাছাড়া সবকিছু ম্যানেজ করেই আমরা মাটি কাটছি, এখানে দোষের কিছু নেই। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ২/১ জন ব্যক্তি আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার জানান, দুই বা আড়াই ফুট পরিমাণ মাটি কৃষি জমি থেকে কেটে নিয়ে গেলে, এ জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। মাটির পুষ্টি গুণাগুণ ও প্রয়োজনীয় উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় উপাদান ও টপসয়েল ঐ জমিতে ফেরৎ আসতে ১০/২০ বৎসর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আইনের বিষয়ে আমাদের কর্মক্ষমতা কম, মাটি কাটার বিষয়ে জানলে আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়।
বেশ কয়েকজন ইটভাটা মালিকের সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, কিছু মাটিওয়ালা মাটি বিক্রি করছে, আমরা কিনছি। তারা মাটি কোথা থেকে আনলো আমাদের কিছু যায় আসে না। ইটভাটার প্রধান কাঁচামাল মাটি, সরকার মাটি কাটা বন্ধ করলে ইটভাটাও বন্ধ করে ফেলুক। প্রতিটি ইটভাটা বাৎসরিক বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারকে প্রদান করে।
সচেতন মহল মনে করেন অচিরেই এ মাটি কাটার মহোৎসব বন্ধ না হলে, খাদ্য সংকট, পরিবেশ বিপর্যয়, দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিসহ নানামুখী সংকটে পড়বে জনসাধারণ। এ বিষয়ে সরকারের আরো যুগোপযোগী উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসনের আরো গতিশীলতা জোরদারকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।
১০ জুন, ২০২৩।