শাহরাস্তিতে মডেল মসজিদের জমি অধিগ্রহণে অর্থ লোপাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোটার
শাহরাস্তি উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে একশ্রেণির প্রভাবশালী ভূমি দালাল চক্র প্রশাসনের যোগসাজশে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মোটা অংকের অথ লোপাটসহ নানা অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, শাহরাস্তি উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে এক শ্রেণির ভূমি দালাল চক্র জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারের কাছ থেকে উচ্চমূল্য আদায়ের জন্য ঐ সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য আবেদন জানায়। স্থানীয় প্রশাসনের গুটিকয়েক অর্থলোভী ব্যক্তিকে হাত করে রাতারাতি নাল জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরেজমিনে ভিটি দেখিয়ে বাজার মূল্যের তিনগুণ অর্থ ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ও প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদন মূলে উল্লেখ করা হয়, যার স্মারক নং ৩৪/ ২০১৮-১২২, তাং ১৭/ ১১/ ২০১৯। ঐ সম্পত্তির ৬০নং নিজমেহার মৌজার ৮৭৪ নং খতিয়ান মূলে যার দাগ নং ৫১৬৬, শ্রেণি নাল, দাগের অন্দরে ভূমি ০.৫২০০ একর, এতে প্রস্তাবিত ভূমি ০.৪৩ একর। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রতি শতক ৬৭ হাজার ৫ শ’ ৯০ টাকা, বাজার মূল্যের তিনগুণ ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ১শ’ ১০ টাকা দেখানো হয়। একই প্রতিবেদনের ২নং ছকে ৮৭৪নং খতিয়ানের ৫১৬৬নং দাগকে নাল সরেজমিনে ভিটি দেখিয়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভূমি সিন্ডিকেট দালাল চক্র। এতে প্রতি শতক ভূমির বাজার মূল্য ধরা হয় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯ শত ৫০ টাকা, বাজার মূল্যর তিনগুণ প্রস্তাবিত ৪৩ শতক সম্পওির বাজার মূল্য ধরা হয় ২ কোটি ৫৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যেখানে একই সম্পত্তি সরকার মাত্র ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ১ শ’ ১০ টাকা মূল্য ক্রয় করতে পারতো। সেখানে নাল সম্পত্তির শ্রেণি পরিবর্তন করায় এতে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪ শ’ ১০ টাকা। আর এ কারবারে ভূমি সিন্ডিকেট দালাল চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় সিঁকি মাইল দূরে জনমানবশূন্য বসতিহীন স্থান এটি। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মসজিদে প্রতিওয়াক্ত নামাজে ১০ জন মুসল্লিও পাওয়া যাবে না। সে স্থানটিতে একজন চিহ্নিত রাজাকারের বাড়ির সামনে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন বেমানান। মসজিদটি এ স্থানে হলে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ৪৬০টি মডেল মসজিদ নির্মানের দূশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এ এলাকার জনগণের দৃষ্টির অন্তরালে পড়ে থাকবে।
তারা আরো জানান, মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবকৃত এ স্থানটি এ উপজেলার একমাত্র পাকিস্তান পাড়া হিসেবে খ্যাত বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার আওয়ামী লীগ একজন রাজাকারের বাড়ির সামনে উপজেলার সর্ববৃহৎ কেন্দ্রিয় মসজিদ নির্মান করতে পারে না।
তারা জানান, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ডাকবাংলো ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মডেল মসজিদের জন্য যে স্থানটি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাওয়া হয়েছিল তা ছিল জনবহুল ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ স্থানে মসজিদটি নির্মিত হলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে ৫শ’ থেকে সহস্রাধিক মুসল্লির উপস্থিতি হতো। এছাড়া সরকার মাত্র ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ১শ’ ১০ টাকা দিয়ে মসজিদের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হতো। অথচ এ ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪ শ’ ১০ টাকা। যা ভূমি দালাল সিন্ডিকেট চক্র তাদের ৪০ লাখ টাকা বাণিজ্যের জন্য এ স্থানটির প্রতি আপত্তি জানিয়ে তাদের দালাল সিন্ডিকেটের সম্পত্তি ক্রয়ে আগ্রহ দেখান।
উল্লেখ্য, ঐ স্থানের জমি অধিগ্রহণ শেষে মসজিদ নির্মাণে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা তদন্তসাপেক্ষে মসজিদের মতো পবিত্র স্থান নিয়ে অর্থ-বাণিজ্য, ভূমি সিন্ডিকেট দালালদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তি, অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানে মসজিদ স্থাপন ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ধর্মমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
৯ অক্টোবর, ২০২০।