শাহরাস্তিতে মুক্তিযোদ্ধা তাজুলের জায়গা দখল

 

সন্ত্রাসী মিজানের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

আবু মুছা আল শিহাব
শাহরাস্তিতে মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের (৬৮) জায়গা দখল করেছে একই বাড়ির মৃত আবদুস ছোবাহানের ছেলে মিজানুর রহমান (৫০)। মিজানের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে বাড়ির লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। রোববার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের সোনাচোঁ গ্রামের উত্তর পাড়া ছোবাহান ডাক্তার বাড়িতে ঐ বিক্ষোভ করে।
জানা যায়, ওই বাড়ির মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে বিডিআর’র হাবিলদার পদ থেকে অবসর নেয়া মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের বসতবাড়ির সামনে পুকুর ও স্থলভাগের জায়গা জবর-দখল করে নিয়েছে একই বাড়ির মৃত আবদুস ছোবাহানের ছেলে মিজানুর রহমান ও তার নাতি ইয়াছিন, সবুজ ও সজিব। বাঁধা দেয়ায় প্রতিপক্ষের আঘাতে আহত হন মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের স্ত্রী নাছিমা বেগম। এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনকে বিবাদী করে শাহরাস্তি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে মিজান ও তার ছেলেরা আমার পরিবারের সাথে সন্ত্রাসীমূলক কাজ করে আসছে। ঘটনার দিন ও সময়ে তারা আমার নিজস্ব ব্যবহৃত জায়গা দখল করতে দলবল নিয়ে আসে। এসময় আমার স্ত্রী নাছিমা বেগম তাদের বাঁধা দিলে তারা অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ বেদম প্রহার করে।
তিনি আরো বলেন, আমি পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছি। তাদের ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে যাই। এরা সমাজটাকে কুলষিত করেছে। মিজান তার ৪ ছেলের বড়াই করে এবং সবার সাথে ৪ ছেলের হুমকি প্রদর্শন করে।
ওই বাড়ির মো. দুলাল মিয়ার ছেলে মো. রাসেল বলেন, মিজান ও তার ছেলেদের ভয়ে বাড়ির লোকজন সব সময় আতংকগ্রস্ত থাকে। কিছুদিন আগে মিজান ও তার ছেলেরা আমাকে রাতের আঁধারে একা পেয়ে বেদম প্রহার করে এবং আমাকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। এভাবে বাড়ির সবার সাথে তারা সন্ত্রাসী আচরণ করে।
মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের ছেলে মো. মাহবুব আলম (২৮) বলেন, মিজান দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সমাজে উঠতি বয়সের ছেলেদের নষ্ট করছে সে। মানুষের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। বাড়ির নারীদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে সে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে মিজানের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী পারুল বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, দখলকৃত জায়গাটি তাদের। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তারা দখল দিয়ে আছে। বহুবার বলার পরও তারা আমাদের জায়গা মুক্ত করেনি। আমার স্বামী ও সন্তানরা তার ওই জায়গা এখন দখলে নিয়েছে।
মিজান ও তার ছেলেদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে মো. দুলাল মিয়ার ছেলে মো. রাসেল (২৫), আবুল বাসারের স্ত্রী নাছিমা বেগম (৩৫), মো. ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম (২৫), মো. রাসেলের স্ত্রী আয়েশা বেগম (২১), ইসমাইলের স্ত্রী কাজল বেগম (২৬), সুমনের স্ত্রী রেখা বেগম (২৫), মো. মিজানের স্ত্রী ভুলু বেগম (৪০), মো. মমিনুল হকের ছেলে শফিক (৩০), মৃত ছেফায়েত উল্লার ছেলে ইব্রাহীম খলিল (৪০), মৃত আমিন উদ্দীনের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৭), মৃত মফিজুদ্দীনের ছেলে শাহজাহান (৫৫), শাহজাহানের স্ত্রী জাহানারা বেগম, (৪৫) ও নজরুল ইসলামের মেয়ে নাছরিন আক্তার (২৪) সহ আরো অনেকে প্রতিবেদককে অভিযোগ জানান।
বাড়ির লোকজন বলেন, মিজান ও তার ছেলেরা ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি করে, অন্যের জায়গা জবর দখলে নিজের করে নেয়, বাড়ির কুমারী বা ছেলে বউদের কু-প্রস্তাবসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। বাড়িতে কারও গাড়ি ঢুকতে দেয় না। চলাচলের রাস্তায় তারা ঘর তুলে রেখেছে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা তাকে মারতে তেড়ে আসে। তাদের ভয়ে বাড়ির লোকজন সব সময় আতংকিত থাকে। এদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য আইনের মাধ্যমে তাদের কঠোর বিচার প্রার্থনা করেন তারা।
২২ মার্চ, ২০২১।