শাহরাস্তির পিতা-পুত্রসহ এক পরিবারের ৩ জন নিহত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা

নোমান হোসেন আখন্দ
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। গত শুক্রবার (৩ মে) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- শাহরাস্তি উপজেলার কাদরা গ্রামের হোসেন আলী বেপারীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৫৮), তার ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম (২৭), তার মামী রাহেলা বেগম (৫৫)। আহতরা হলেন- আলমগীর হোসেনের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) ও প্রাইভেট কার চালক ইব্রাহিম খলিল সুজন (৩৩)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। শুক্রবার পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলায় কাদরা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বেড়ানো শেষ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মামী রাহেলা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশে ঢাকাতে নিয়ে আসছিলেন তিনি।
পথে রাত দেড়টার দিকে তাদের প্রাইভেটকারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া মানাবে ওয়াটার পার্কের সামনে আসলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দিলে দিলে তা রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এসময় আলমগীর হোসেনসহ ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। চালকসহ আহত দুইজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মল্লিক বলেন, রাত ১টা ৫০ মিনিটে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই। খবর পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। হতাহত সবাইকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাদিয়া আফরিন বলেন, রাত আড়াইটার দিকে আমাদের হাসপাতালে ৫ জন রোগী নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করি। আহত নজরুল ও সুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মরদেহগুলো বর্তমানে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। ঘাতক কাভার্ডভ্যানটিকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।
শাহরাস্তির কাদরা কর্ণপাড়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন জানান, কুয়েত প্রবাসী আলমগীর হোসেন বাড়িতে কমই আসতেন। তিনি ঢাকার ডেমরা এলাকায় ৮ তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। পরিবারের লোকজন নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। তার নিহত ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রবাসী আলমগীর হোসেনের মামা মারা যাওয়ার পর তার মামী লায়লা খাতুনকে তার গ্রামের বাড়ি কাদরায় নিয়ে আসেন। গ্রামের বাড়ি দেখাশোনা করেন মামী লায়লা খাতুন। তিনি অসুস্থ থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের ৩ জনকেই কাদরা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার প্রস্ততি চলছে।
আজ রোববার (৫ মে) তাদের দাফন সম্পন্ন করা হবে। পিতা-পুত্রসহ একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌঁছলে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম চলছে।

০৫ মে, ২০২৪।