শোকসাগরে জাকার্তা

নিহতদের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সলিলসমাধি ঘটেছে বহু পরিবারের স্বপ্নসাধ ও আনন্দের। এই দুর্ঘটনায় ১৮১ যাত্রীর কেউ বেঁচে নেই।

শোকসাগরে মুহ্যমান পুরো ইন্দোনেশিয়া। স্বজন হারানো মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার পেরদানাকুসুমা বিমানবন্দরের পরিবেশ।

শোকে পাথর অভিজ্ঞ দুই পাইলট ও ছয় ক্রুর পরিবার ও বন্ধুরা : ক্যাপ্টেন ভব্যে সুনেজা। ৩১ বছর বয়সী এই পাইলট ২০১১ সালে লায়ন এয়ারে যোগ দেন। ৬ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল সুনেজার।

সহকারী পাইলট ছিলেন হারভিনো। তার অভিজ্ঞতা ছিল ৫ হাজার ঘণ্টা বিমান চালনার। ছয় কেবিন ক্রু শিনতিয়া মেলিনা, সিত্রা নোইভিতা অ্যানজেলিয়া, আলভিয়ানি হিদায়াতুল সোলিখা, দামায়ান্তি সিমারমাতা, মেরি ইউলিয়ান্দা ও দেনি মওলা। আটজনের অভিজ্ঞ দলটির অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে তাদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। নয়াদিল্লি থেকে সুনেজার এক চাচা বিবিসিকে বলেন, ‘পুরো পরিবার এখন শোকে পাথর। কথার বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে তারা।’

রহস্যজনক যুগল : ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাওয়া একটি আইফোনের কভারের ছবিতে রহস্যজনক এক যুগলের খোঁজ মিলেছে। ছবিতে দেখা গেছে, হাতে হাত রেখে একটি ব্রিজের ওপর তারা হাঁটছে। তাদের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি।

ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় জানতে ছবিটি পোস্টও করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন হদিস মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি তাদের বিয়ে হয়েছিল।

নতুন বউয়ের অপেক্ষায় : স্বজনরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তাদের কাছের মানুষটি আর নেই। প্রিয়জনের সংবাদ পেতে অধীর আগ্রহে জাকার্তা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন অনেকেই। তাদের একজন তরুণ মুরতাদো কুরনিয়াওয়ান।

বিমানে ছিলেন তার স্ত্রী। সবে বিয়ে করেছেন তারা। বিয়ের পর কাজে যোগ দিতে পাংকাল পিনাং যাচ্ছিলেন স্ত্রী। ছলছল নয়নে আর এক বুক কষ্ট নিয়ে মুরতাদো বলেন, তাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব। আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে শেষ যে কথাটি আমি বলেছিলাম, সেটা হচ্ছে, সাবধানে যেও।

দাদির শেষকৃত্যে যাওয়া হল না মিশেলের : সংবাদ এসেছে, মারা গেছেন প্রিয় দাদি। তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে তাড়াহুড়ো করে জাকার্তা থেকে পাংকাল পিনাংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মিশেল ভার্জিনা বংকাল (২১)।

সচেতনভাবেই লায়ন এয়ার এড়িয়ে চলে তার পরিবার। তবে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর তাগিদে লায়েন এয়ারে টিকিট কাটেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই ম্যাথুউ (১৩), বাবা অ্যাডোনিয়া (৫২)।

মিশেলের বোন বীনা বিবিসিকে বলেন, ‘প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগেও মায়ের সঙ্গে কথা হয় মিশেলের। অল্প সময় পরই খারাপ সংবাদ। দাদির শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক শোক।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০ কর্মকর্তার জন্য শোকে স্তব্ধ সহকর্মীরা : বিমানে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০ জন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের পাংকাল পিনাং শাখায় কাজ করতেন তারা। জাকার্তায় পরিবারের সঙ্গে সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থালে ফিরছিলেন তারা।