ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে অদৃশ্য শক্তির কারণে বারংবার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন ফরিদগঞ্জের এক ব্যবসায়ী। টিনের দোকান ঘর ভেঙ্গে পাকা ভবন করার জন্য ইট বালুসহ সকল কিছু এনে জড়ো করলেও ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও পরে থানা পুলিশ বাঁধা দিয়েছে। অথচ উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ নিজেরা এসে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি চিহ্নিত করে গেছে। তারা ওই সময় মৌখিকভাবে বলেছে আমাদের সম্পত্তিতে পরিষদের কোন সম্পত্তি নেই। তারপরও বাঁধা দেয়া বন্ধ নেই। সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে নিজের সম্পত্তির অধিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ফরিদগঞ্জের গোয়ালভাওড় বাজারের আলী হোসেন বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী।
বুধবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোয়ালভাওড় বাজারের ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বেপারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আমি ও আমার পরিবার আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোয়ালভাওড় বাজারে বিগত ১৯৯১ইং সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসা করে আসছি। সেই বাজারেরই ইউনিয়ন পরিষদের অপর পাশে সুমন পাল থেকে ২০১২ সালে ১ শতক জমি ক্রয় করে দখলে আাছি। উক্ত জমিতে আমার টিনের কাচা ঘর ছিল। কিন্তু উক্ত কাচা ঘর থাকাবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান দাবি করেন উক্ত সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা রয়েছে।
এ কথার প্রেক্ষিতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার সালিস হয়। ঐ সালিসের সিদ্ধান্তক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হান্নান মিয়া এবং সাবেক চেয়ারম্যান খাজে আহাম্মদ ভূঁইয়াসহ উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগোর কাছে গিয়ে আমাদের কাগজপত্র এবং ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। তখন ভুমি অফিস কর্তৃপক্ষ মৌখিক ভাবে সিদ্ধান্ত দেন আমাদের সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ কোন জায়গা পাবে না। এই সিদ্ধান্তের পরও চেয়ারম্যান আমাদের কাছে সময় চায়। তখন আমরা চেয়ারম্যানের কথা রাখি। তারপর চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ফরিদগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ড অফিস থেকে কানুনগো এবং সার্ভেয়ার গত ১৫ জুলাই বুধবার ইউনিয়ন পরিষদে এসে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা মেপে বুঝিয়ে দেন।
কানুনগো এবং সার্ভেয়ার জায়গা পরিমাপের সময় চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যরা উপস্থিত থেকে পরিষদের জায়গা বুঝে নেন। ওই সময় নিশ্চিত হয় আমাদের সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি নেই। তাই দখলের প্রশ্নই উঠে না। এমনকি ওই সম্পত্তিতে কোন খাস বা সরকারি জমি নেই। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে ভবন নির্মাণে লিখিত অনুমতি চাইলে চেয়ারম্যান আমাদের মৌখিক অনুমতি দেন। পরে আমরা ২১ জুলাই মঙ্গলবার ওই স্থানে টিনের ঘর সরিয়ে পাকা ভবন করার জন্য ইট, বালু এবং রড এনে কাজ শুরু করি। কিন্তু ওই দিনই বিকালে ফরিদগঞ্জ থানার একজন এসআই এসে মৌখিক ভাবে আমাদের বলে ওসির নির্দেশে কাজ বন্ধ করতে বলে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় ওসির সিদ্ধান্ত মতে আমরা কাজ বন্ধ রাখি। পরে ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার সকল কাগজপত্র এবং দলিল নিয়ে ওসি আব্দুর রকিবের সাথে দেখা করি। কিন্তু তখনও ওসি কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেন। তা মেনে নিয়ে তারপর আমরা গত ২৬ জুলাই রোববার ওই কাগজপত্র নিয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর নিকট যাই। সেদিনই দুপুরে দুপুরে হঠাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাবেক চেয়ারম্যান খাজে আহাম্মদ ভূঁইয়া এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারা মৌখিক বক্তব্যে আমাদেরকে সন্ত্রাস এবং মাদক সেবী বলে চিহ্নিত করে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আনেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের বি.এস দাগ এবং আমাদের জমির বি.এস দাগ আলাদা।
তিনি আরো বলেন, গত ২৯ বছর ধরে আমরা ওই বাজারে ব্যবসা করে আসছি। বর্তমানে আমাদের ৪টি প্রতিষ্ঠানে আমরা নিজেরা কাজ করার সাথে সাথে ২০জন কর্মচারী কাজ করছে। আমার ভাতিজা সোহেল বেপারী উপজেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী।
বরং গত ৬ মে বুধবার গোয়ালভাওড় বাজারের দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনার সময় কোন কারণ ছাড়াই আমার মেসার্স নাহিদ ডিপাটমেন্টাল স্টোরে ভাংচুর চালিয়ে সন্ত্রাসীরা লুটপাট করে। আমার দুই ভাতিজা সোহেল বেপারী ও জুয়েল বেপারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। উক্ত ঘটনায় আমার ভাতিজা সোহেল বাদী হয়ে উক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও ওসির ঘটনা মিমাংসা করে দিবেন বলে আশ^াস দেন। কিন্তু মামলা গ্রহণও করেন নি। এমনকি মিমাংসাও করেন নি। এরপর থেকে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তাদের কারণে আমাদের ব্যবসা বানিজ্য এমনকি আমাদের জীবন হুমকির মুখে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের সম্পত্তিতে যদি ইউনিয়ন পরিষদ কোন জায়গা পায় তাহলে আমরা উক্ত জায়গা ছেড়ে দিব। আর যদি উনারা আমাদের কাছ থেকে কোন জায়গা না পায়, তাহলে আমাদের হয়রানিমুক্ত করার জন্য অনুরোধ রইল।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সফল মৎস্য ব্যবসায়ী সোহেল বেপারী, তরুণ আইনজীবী মাসুদ গাজী।
৩০ জুলাই, ২০২০।