সৌদি আরব ব্যুরো
সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারতীয় দূতাবাস গত মঙ্গলবার যৌথভাবে আনন্দ উৎসবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মৈত্রী দিবস উদযাপন করেছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দুদেশের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সরকার এ দিনটিকে মৈত্রী দিবস হিসেবে যৌথভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রিয়াদের ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারে অবস্থিত বাংলাদেশ ও ভারতের দূতাবাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের মহাসচিব ড. নায়েফ ফালাহ মুবারাক আল হাজরাফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে সৌদি আরবের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বন্দর খামিস, শুরা কাউন্সিলের সদস্য সৌদি-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশীপ কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল আব্বাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল শামেরি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, সৌদি অফিশিয়াল, ব্যবসায়ী, চেম্বার কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মিডিয়ার প্রতিনিধি ও দুদেশের কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চিরস্থায়ী বন্ধুত্বকে প্রতিফলিত করে যা আমাদের দুদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আত্মত্যাগের ফসল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুদেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন যা দুদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক ও দৈনন্দিন জীবনধারায় অভূতপূর্ব মিলের বহিঃপ্রকাশ।
রাষ্ট্রদূত এই উৎসব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আমাদের জনগনের মঙ্গল এবং দুদেশের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমাদের দৃঢ় এবং স্থায়ী সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে ভারতের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত এক দশকে উভয় দেশ নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, সংযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি ভারতের সাথে আগামী দিনে আরও জোরদার বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
সৌদি আরবে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ড. অসাফ সাঈদ বাংলাদেশের জনগণকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ভারতের জনগণের হৃদয়ে বিপুল প্রশংসা এবং শ্রদ্ধার জায়গা করে নিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক পরিচালনা করছেন যা আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে ও তাঁর আদর্শ ধারণ করতে সহায়তা করবে। ভারতের রাষ্ট্রদূত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদ ও ভারতের যেসকল বীর সেনারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এ অঞ্চলের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে যা এখন একটি বিশিষ্ট অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তিনি গত ৫০ বছরের ভারত বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ককে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনার জন্য সম্পর্কের একটি সোনালী অধ্যায় বলে অভিহিত করেন যা আগামি দিনে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
ভারতের রাষ্ট্রদূত ড. অসাফ সাঈদ দুদেশের দূতাবাস নিয়ে এমন চমৎকার যৌথ উদযাপন খুবই বিরল বলে উল্লেখ করেন, যা আমাদের দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে বলে এক আলাপচারিতায় জানান ।
মৈত্রী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ভারতীয় দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে একটি মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় যেখানে স্থানীয় ভারতীয় শিল্পীরা নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশ থেকে আগত একটি দল দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্য, বাংলার আবহমান জীবনধারা নিয়ে ‘বৈচিত্রময় বাংলাদেশ’ নামে একটি চমৎকার দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে।
পরে, দু’দেশের রাষ্ট্রদূতরা অতিথিদের নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গনে ‘মৈত্রী দিবস’ লোগো উন্মোচন করেন। এছাড়া এ উপলক্ষে বিশেষ অতিথিদের নিয়ে একটি কেক কাটা হয় এবং ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অতিথিদের জন্য দূতাবাসে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
০৯ ডিসেম্বর, ২০২১।