সাগর চৌধুরী
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত ৩৭ বছরের পুরোনো বাংলাদেশ কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটির নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত রোববার সকালে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসি। অন্য সদস্যরা হলেন- পরিকল্পনা অধিশাখার উপপ্রধান শেখ মো. শরীফ উদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক কাজী জিয়াউল হাসান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আনোয়ারুল হক।
প্রতিনিধি দলের সম্মানে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। বিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মেহেদী হাসান, বিদ্যালয় বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেযারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সিগনেটরী মো. আবদূল হাকিম, কো-সিগনেটরী ইঞ্জিনিয়ার গোফরান, সদস্য ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হকসহ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আমরা এসেছি আপনাদের সমস্যাগুলো দেখে সমস্যা সমাধানে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরী করতে। প্রবাসীদের কল্যাণ সাধন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রবাসীদের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। শিক্ষা বিস্তারেও আমরা কাজ করে থাকি। প্রবাসীদের সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকি। প্রবাসে শিক্ষা বিস্তারে আমরা সদা তৎপর। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সৌদি আরবের ছয়টি স্কুল ভিজিট করবে এবং অবকাঠামো নির্মাণের অবস্থা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। হাজার সমস্যা থাকবে কিন্তু মাইগ্রেশন বন্ধ হবেনা এই বিদ্যালয় থাকবে এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা করবে। আমিও চাই এখানে ভালো একটি বিদ্যালয় নির্মাণ হোক। আমরা প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী ইন্সুরেন্স চালু করতে যাচ্ছি। রেমিটেন্স বৈধ উপায়ে দেশে পাঠানোর অনুরোধ জানান।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের কারণে আমাদের দেশে বেকার সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আপনাদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। স্কুল টেকসই করার ক্ষেত্রে বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের অবদান অপরিহার্য এবং এ সুন্দর আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মেহেদী হাসান এ ধরনের সুন্দর আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং বিদ্যালয়ের দাবির সাথে সহমত প্রকাশ করেন। তিনি বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চর্চার অনুরোধ জানান।
বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, প্রতিদিন প্রভাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়ে এই প্রতিষ্ঠানে। তিনি দাবি করেন, বিশাল ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে এই বিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে সংকট উত্তরণে মানবতাবাদী নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী তিন কোটি টাকার আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে ওঠতে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা আমৃত্যু স্মরণ রাখবে। কিন্তু বর্তমান এবং স্থায়ী সংকট উত্তরণে বিদ্যালয়টি নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কোন বিকল্প নাই।
ভাইস চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। আপনাদের পাশে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। প্রবাসের বুকে আমাদের এই বিদ্যালয়টি প্রবাসী সন্তানদের দেশের আদর্শ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে যে ভূমিকা পালন করছে জাতি একদিন কৃতজ্ঞতা চিত্তে তা স্মরণ করবে। দূরপ্রবাসেও আমাদের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীক্ষিত করার ক্ষেত্রে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকি। প্রতিদিন প্রাতঃসমাবেশে দেশপ্রেমের মহামন্ত্রে তাদের উদ্ভাসিত করা হয়। ক্যাম্পাসে এলে মনে হয় আমরা যেন বাংলাদেশের কোন একটি প্রতিষ্ঠানেই অবস্থান করছি। নিমিষেই ভুলে যাই প্রবাস জীবনের যান্ত্রিক দুঃসহ যন্ত্রণা। প্রবাস জীবনে এখন কিছুটা ক্রান্তিকাল চলছে। তা থেকে উত্তোরণের জন্য এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে সময়ের দাবী হচ্ছে এই বিদ্যালয়কে একটি স্থায়ী ও নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা। তার বিশ্বাস জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ভাড়া করা বাড়িতে আমাদের সন্তানরা যেন দিনদিন হাঁফিয়ে ওঠছে। এই ভাড়া করা বাড়িতে অনেক সময় আমরা প্রবাসনীতির যাতাকলে পড়ে ভাড়ার থেকে বেশি পরিমাণ জরিমানা গুণতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের সদাশয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আমরা আজ আশ্বস্ত হয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি অচিরেই আমাদের প্রিয় এই বিদ্যালয়টি নিজস্ব ক্যাম্পাসে ঠাঁই করে নেবে।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক খাদেমুল ইসলাম ও মো. রেদওয়ানুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফেজ মো. ইব্রাহীম পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত ও তরজমা করেন।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আফজাল হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যে অতিথিদের বিদ্যালয়ে আগমনের জন্য উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জাতির পিতার যোগ্য তনয়া শিক্ষাবান্ধব জননেত্রী দেশকে যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা অতীতের কোন সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলাদেশের নাম সগৌরবে অঙ্কিত হবে। তিনি আরো আশা করেন প্রবাসের বুকে নিজস্ব ভূমিতে যে পাঁচটি বিদ্যালয় নির্মিত হবে তার একটি হবে আমাদের এই বিদ্যালয়। আমরা শুধুমাত্র জাতীয় কারিকুলাম অনুসরণ করে ক্ষান্ত থাকিনা, প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সন্তানদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশীয় উতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকি। আমাদের বিদ্যালয়ের রয়েছে এক সুবিশাল ঐতিহ্যগত ইতিহাস, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সংস্থা নাসা থেকে শুরু করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশের এবং প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জ্বল করে চলেছে নিরন্তর। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসামান্য অবদান রেখে চলছে।
সিগনেটরী মো. আবদূল হাকিম বলেন, আমরা আনন্দিত এবং অভিভূত। আমাদের সন্তানদের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। তাদের প্রিয় এ বিদ্যালয় অচিরে স্থানান্তরিত হবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে। আমরা সত্যি আজ অভিভূত। আপনাদের সুনেতৃত্বে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ একটি মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত।
কো-সিগনেটরী ইঞ্জিনিয়ার গোফরান বলেন, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি প্রবাসের বুকে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য নিজস্ব ভূমিতে বিদ্যালয় নির্মাণ সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফল্যের আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করে প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করছেন।
বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সারা আজাদের হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার স্বপ্ন প্রবাসে সরকার একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করলেও তার বিদ্যালয়টি বাদ যাবেনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন নামকরণের প্রস্তাব রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। পরে ফিজিবিলিটি টিম বিদ্যালয়ের জন্য নির্বাচিত ভূমি পরিদর্শন করেন।
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।