রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়বাহ আগুনে ছয়টি মার্কেটের পাঁচ থেকে ছয় হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মধ্য দিয়ে দোকান মালিকসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার পরিবার পথে বসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে হাজীগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা ১০ মিনিটে এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচুই গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান হাজি জসিম উদ্দিনের তিন ভাইয়ের ১৫টি দোকানঘর ও গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মহসিন উদ্দিন তুষারসহ তাদের তিন ভাইয়ের ৫টি দোকানঘর, বোরহান উদ্দিন, ইমরান হোসেন, আনোয়ার হোসেন, নাজির হোসেন আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর দোকানঘর পুড়ে অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচুই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য হাজি জসিম উদ্দিন ও তার ভাই ফারুক হোসেন এবং হরিপুর গ্রামের মহসিন উদ্দিন তুষার। ক্ষতিগ্রস্ত ফারুক হোসেন জানান, জসিম উদ্দিন, আব্দুর রহিম, আব্দুল হান্নান, মানিক হোসেনসহ তাদের ৫ ভাইয়ের ১৫টি দোকানঘর ও মালামাল আগুনে পুড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, হাজীগঞ্জের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীর দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অপর ক্ষতিগ্রস্ত মহসিন উদ্দিন তুষার জানান, গত ত্রিশ বছর যাবৎ তাদের পরিবার বঙ্গবাজারে ব্যবসা করে আসছে। সেখানে বড় ভাই জসিম উদ্দিন ও জহির হোসেনসহ তাদের তিন ভাইয়ের পাঁচটি দোকান রয়েছে। সবাই পাইকারি, খুচরা, তৈরি পোশাক ও থান কাপড়ের ব্যবসা করে থাকেন। এই পাঁচটি দোকানঘর পুড়ে তাদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, চোখের সামনে সব কিছু পুড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সব ব্যবসায়ী নিজের সহায়-সম্বল, ধার-দেনা, ব্যাংক ঋণ ও বাকিতে মালামাল স্টক করেছেন। রমজানে স্টককৃত এসব মালামাল পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে ঋণ ও বাকি টাকা পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি লভ্যাংশের টাকা দিয়ে নিজের ও কর্মচারীর জীবিকা নির্বাহসহ কিছু টাকা সঞ্চয় করবেন। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, আগুন তাদের সবাইকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়েছে। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আগুনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক সংবাদকর্মীদের জানান, এদিন ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৬টা ১২ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে ৫১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর এদিন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় ও এলাকাবাসী। এতে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষ এ মাসে মালামাল রির্জাভ করে রেখেছিল ব্যবসায়ীরা। সবার স্বপ্ন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল।
হাজীগঞ্জের জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোনো অবস্থা নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ কর্মরত ছিলেন। ঈদের আগে সব দোকানে মালামাল তোলা হয়েছিল। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে- তা এখন বলা যাবে না।
০৫ এপ্রিল, ২০২৩।