হাজীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ২টি ফার্নিচার দোকান গোডাউনসহ পুড়ে ছাই

ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফিলতির অভিযোগ!

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ বাজারে আগুন লেগে গোডাউনসহ দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল পুড়ে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার (১৭ জানুয়ারি) ভোরে হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারস্থ বড়পুলের পূর্ব পাশে (হাজীগঞ্জ বাজার সেতু) একটি কাঠের ভবনে বৈদ্যুতিক সর্ট-সার্কিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আগুনে তিনতলা বিশিষ্ট কাঠের একটি ভবন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ সময় তিনতলা ভবনে থাকা কাটগোলা এন্ড ফার্নিচার ও ফারিহা ফার্নিচার নামক দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শো-রুম ও দুইটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে করে দুইটি প্রতিষ্ঠানের শো-রুম ও গোডাউনে থাকা মজুদকৃত মালামাল, নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া পাশে থাকা হারেছ প্লাজা নামের একটি ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাথে পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার ফায়ার সার্ভিস যোগ দেয়। কিন্তু আগুনে দুইটি দোকানঘর ও গোডাউনে থাকা মালামালসহ সব কিছু এমনভাবে পুড়েছে, যে শেষ সম্বল বলতে কিছুই থাকেনি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ পাশে থাকা অন্য ব্যবসায়ীরা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন।
খবর পেয়ে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সমবেদনা জানান পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মো. মাইনুদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রশিদ মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা. আহসান হাবিব অরুন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সৈয়দ আহাম্মদ খসরু, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ আসফাকুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হায়দার পারভেজ সুজনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী কাঠগোলা এন্ড ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আব্দুল মান্নান জানান, এ দিন ভোরে ফারিহা ফার্নিচারের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দোকানগুলোতে কাঠ ও দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়াসহ ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততোক্ষণে তার শো-রুম ও গোডাউনে থাকা মজুদকৃত মালামাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, ভূমির দলিলপত্র, সব প্রকার লাইসেন্স (ট্রেড, ফায়ার, ভ্যাট লাইসেন্স ইত্যাদি) সহ সবকিছু পুড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ফারিহা ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী মো. খোকন মিয়া জানান, তার শো-রুম, মজুদকৃত মালামাল ও নগদ টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়া পুড়ে যাওয়া তিনতলা দোকান-ঘরটির মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
পার্শ¦বর্তী দোকানের মালিক সাজ্জাদ হোসেন জানান, আগুন লাগার দৃশ্য দেখে সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে ৪.৩৪ মিনিটে ফোন দেই। ফায়ার সার্ভিস সাথে সাথে ঘটনাস্থলে আসলেও রিজার্ভ পানির মেশিন নস্টের অযুহাতে প্রায় আধাঘণ্টা পর পানি সরবরাহ করতে পারে। এতে করে অগ্নিকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে।
হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসও মো. জাকির হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগে (সর্ট-সার্কিট) আগুনের সূত্রপাত। তিনি বলেন, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়াসহ ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তদন্ত শেষে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
এ সময় দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যে কোন দুর্ঘটনায় আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি। এক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছি এবং আগুনের ভয়াবহতা দেখে শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। পরবর্তীতে তারাও এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের সাথে যোগ দেয়।
১৮ জানুয়ারি, ২০২১।