হাজীগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আলুর রেকর্ড পরিমাণ চাষ হয়েছে। তবে দাম কমে যাওয়ায় লাভের বদলে ব্যাপক ক্ষতি ও লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। এছাড়া হিমাগারের (কোল্ডস্টোরেজ) ভাড়া বৃদ্ধি করায় এবং আলু সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। এতে লাভের আশা-তো দূরের কথা, আলু নিয়ে বিপাকে এবং চাষের খরচ ও দেনা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক চাষি।
জানা গেছে, এ বছর উপজেলা পর্যায়ে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫৩০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ছিলো ১৩ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭৯৭ হেক্টর জমিতে এবং আলু উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অর্থ্যাৎ ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায়, শীতে কুয়াশা না পড়ায় এবং রোগ-বালাই না হওয়ায় আশানূরূপের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে আলুর আবাদ রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে। কারণ, বর্তমানে প্রতিকেজি আলু পাইকারি দরে ১২-১৩ টাকা এবং খুচর পর্যায়ে প্রতিকেজি ১৮-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৫ টাকা। মাঝখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এ অবস্থায় কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
তারা আরও জানান, এ বছর বীজ ও সারের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে বেশি। গত মৌসুমে প্রতিকেজি আলুর বাজার দর উঠেছিল ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত। তাতে কমবেশি সবাই লাভবান হয়েছে। সেই আশায় এবার অনেকে বেশি জমিতে আবাদ করেছেন। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৭০-৯০ টাকায়। এখন মাঠে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়।
কথা হয়, উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের তারপাল্লা গ্রামের কয়েকজন আলু চাষির সাথে। এর মধ্যে জসিম নামের এক চাষি ১২০ শতাংশ, আব্দুল হাই ১৫০ শতাংশ, মুছা ১৩২ শতাংশ ও আব্দুল জলিল ১২০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তারা সবাই জানান, বীজ, সার, কীটনাশক, স্প্রে, শ্রমিক, সেচ, জমি প্রস্তুতকরণ ও ফসল উত্তোলন, পরিবহনসহ প্রতিকেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২৫ টাকা।
তারা বলেন, ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের নিচে অর্থ্যাৎ অর্ধেক দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজ খরচও বেশি। সরকারি হিসেবে প্রতিকেজি আলু কোল্ডস্টোরে খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সার কথা বলা হলেও রাখা হচ্ছে ১০ টাকা করে। তারপরও অনেকে ভালো দামের আশায় কিছু আলু কোল্ডস্টোরে রেখেছেন। আবার অনেকে খরচ বৃদ্ধির কারণে সনাতন পদ্ধতিতে ‘আলু ঘর’ সংরক্ষণ করছেন।
এদিকে খরচ বেশি হলেও ভালো দামের আশায় কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় কোল্ডস্টোর না থাকায়, তাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই, বাধ্য হয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ‘আলু ঘর’ এ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। জসিম উদ্দিন নামের একজন চাষী জানান, কোল্ডস্টোরেজ খরচ বেশি হওয়ায় তারা আলু ঘরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করছেন। আর এভাবে ২-৩ মাস আলু সংরক্ষণ করা যায়। দাম কিছুটা বেশি হলেই, আলু ছেড়ে (বিক্রি) দিবেন।
এ বিষয়ে কথা হয় পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে। তারা জানান, সরাসরি চাষির কাছ থেকে আলু ক্রয় না করে তারা বেপারীদের কাছ থেকে কেনেন। সেখান থেকে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে দুই-তিন টাকা লাভে বিক্রি করেন। তবে বাজার দর কমের কারণে, এবার কৃষকরা আলুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে তারা স্বীকার করেন।
স্টোরেজ খরচ বেশি রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে মান্নান কোল্ডস্টোরেজ ম্যানেজার দীলিপ কুমার সাহা জানান, তারা সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যেই অর্থ্যাৎ প্রতি কেজি ৬ টাকা ৭৫ পয়সা দরে আলু সংরক্ষণ করেছেন। এ পর্যন্ত (১৬ মার্চ) তারা ১ লাখ ১ হাজার ৭শ’ বস্তা অর্থাৎ ৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। যার ফলে বাজারে দাম কিছুটা কম। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, কোল্ডস্টোরে ধারণ ক্ষমতার সবটুকুই পূরণ হয়েছে। তাই, কৃষকদের সনাতন পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছি।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগ সব সময় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। চাষিরা কোল্ডস্টোরের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষণ করলে এখন যে বাজারমূল্য আছে, তার চেয়ে বেশি পাবে বলে আশা করেন। এসময় তিনি বলেন, কোল্ডস্টোরে সরকারি নির্ধারিত মূল্যের বেশি রাখা হলে এবং অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৭ মার্চ, ২০২৫।