হাজীগঞ্জে কৃষকদের চাঁদার টাকায় মিঠানীয়া খালের খনন শুরু

উপকৃত হবে ১১টি স্কীমের কয়েক হাজার কৃষক

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
দখল, দূষণ ও আবর্জনা ফেলায় মৃত প্রায় হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মিঠানীয়া খালটি। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাবে বহুদিন ধরে মকিমাবাদ ও খাটরা-বিলওয়াই মাঠের অধিকাংশ স্থানে ফসলের জমি অনবাদী হয়ে পড়েছিল। খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে কৃষক, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরারা দাবি জানিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ অবস্থায় গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) থেকে কৃষকরা চাঁদা দিয়ে খালটি খননের কাজ শুরু করেন। হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানীয়া ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে খালটি খননের কাজ শুরু করা হয়। এর ফলে খালটি পুনর্জীবনের পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে চাষসহ হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রায় ১১টি স্কীমের কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবেন, বাড়বে ফসলের উৎপাদন।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া নদী থেকে শুরু করে মিঠানিয়া খালটি হাজীগঞ্জ পৌরসভা হয়ে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন উপর দিয়ে বিভিন্ন খালের সাথে সংযোগ। এ খাল দিয়ে একসময় নৌকাযোগে লোকজন চলাচল করতেন। বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে মাছ নিধন করে মানুষ পারিবাহিক চাহিদা পূরণ করে সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন।
এছাড়া খালটির সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ফসল উৎপাদনে। খালের পানি ব্যবহার করে পৌরসভাধীন ৩, ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের খাটরা বিলওয়াই ও মকিমাবাদ এলাকা, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া, মাতৈন, দোয়ালিয়া, মৈশাইদ, খাকবাড়িয়া, বাড্ডা, বাউড়া, শাহপুর, সুবিদপুর, মাড়ামূড়া ও কালচোঁ গ্রামের একাংশ প্রায় কয়েক হাজার কৃষক ফসল ফলাতেন। কিন্তু দিনে দিনে খালটি দূষণ ও দখলের কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি প্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষ করে পৌর এলাকার হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মিঠানিয়া ব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে আবর্জনা, দখল ও দূষণের ফলে খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এভাবেই কয়েক বছর কেটে যায়। এর মধ্যে খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বহুবার বলা হলেও বারবার আশাহত হতে হয় তাদের। অথচ এই খালটি দিয়ে সাত-আটটি বিলের পানি নিষ্কাশন হতো।
অবশেষে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মাতৈন গ্রামের কৃষকদের প্রতিনিধি মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কৃষকদের অর্থায়নে মিঠানিয়া ব্রিজের অংশে খাল খননের কাজ শুরু করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভ্যেকু দিয়ে মিঠানিয়া ব্রিজের দু’পাশে খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করা হচ্ছে। খালটির এ অংশে খনন হয়ে গেলে পানি প্রবাহ শুরু হবে এবং খাটরা-বিলওয়াই ও মকিমাবাদ গ্রামের অনবাদি জমিতে চাষাবাদ হবে।
খাটরা-বিলওয়াই মাঠের স্কীম ম্যানেজার মো. আবুল হাসেম অভিমানের সুরে বলেন, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ কতজনের কাছে কৃষকরা গিয়েছে, কোন কাজ হয়নি। সামনে হবে কিনা তাও জানি না। তাই কোন উপায়ন্ত না দেখে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ও স্কীমের স্বার্থে আমরা (কৃষকরা) নিজস্ব অর্থায়নে খাল খননের কাজ শুরু করেছি।
মাতৈন গ্রামের কৃষকদের প্রতিনিধি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের অনুরোধে এবং তাদের সহযোগিতা ও অর্থায়নে আমি এগিয়ে এসেছি। আশা করি পানি প্রবাহ শুরু হলে অনাবাদি জমিতে ফসলের চাষসহ ব্যাপকহারে চাষাবাদ এবং খাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এসময় তিনি আরো বলেন, এ বছর কৃষকরা খালটির কিছু অংশে খনন কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু পুরোটা খনন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া খননকৃত অংশে আগামি বছর আবারো দূষণ ও ভরাট হয়ে যাবে। তখন কি হবে? তাই স্থায়ী সমাধানে লক্ষ্যে পুরো খালটি খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন।
এদিকে কৃষকদের প্রশংসা ও তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, প্রধানমন্ত্রীর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যে ওই এলাকার কৃষকরা খাল খননে এগিয়ে এসেছেন। এতে খালে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ওই এলাকার প্রায় ৪৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। তিনি খালটি খননের বিষয়ে বিএডিসি’র সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএডিসি কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ ও পরে ব্যাক না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, কৃষকরা স্বেচ্ছায় খালে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করছেন। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি বলেন, টেকসই ব্যবস্থাগ্রহণে আমি মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলবো।

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩।