কৃষকসহ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কয়েক গ্রামের মানুষ
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে খোদ্দ গাং নামক খালের একাংশে বাঁধ দিয়ে ছোট পুকুর বানানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে বাঁধ দেওয়ায় খালে আগামি বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন কৃষকসহ স্থানীয়রা। পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি শুকনা মৌসুমে খালের পর্যাপ্ত পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না কৃষকেরা। তাই খালটি দখলমুক্ত করে খননের দাবি জানান কৃষকসহ স্থানীয়রা।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর উত্তর অংশটি খোদ্দ গাং নামে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। এটি গাং (নদী) নামে পরিচিত হলেও মূলত এটি একটি জলাশয়। এ জলাশয়ের পশ্চিম পাশে কৈয়ারপুল-উচ্চঁগা-অলিপুর সড়ক পাশে একটি খাল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে বাকিলা ইউনিয়নের ফুলঁেছায়া, সন্না, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বেতিয়াপাড়া-সুবিদপুর, উচ্চগাঁ ও অলিপুর এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার ও মহেশপুর গ্রামের পানি নিস্কাশন হয়ে থাকে।
পাশাপাশি ওই খাল ও খোদ্দ গাংয়ের পানি ব্যবহার করে সদর ইউনিয়নের উচ্চগাঁ ও অলিপুর এবং বাকিলা ইউনিয়নের মনিহার ও মহেষপুর গ্রামের একাংশের কৃষকরা শস্য উৎপাদন করে থাকেন। বিশেষ করে উচ্চগাঁ, অলিপুর ও মনিহার (পূর্বাংশ) গ্রামটি কুমড়া ও মূলা চাষের জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি (সুনাম) রয়েছে। খননের অভাবে খোদ্দ গাংটি গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রায় মৃত হয়ে পড়ে। তারপরও কৃষকরা এ গাংয়ের সুফল ভোগ করে থাকেন।
এ খোদ্দ গাংয়ের কৈয়ারপুল-উচ্চঁগা-অলিপুর সড়কের খোদ্দ ব্রিজের (কালভার্ট) পশ্চিম পাশে একটি খাল রয়েছে। যা খোদ্দ গাং সংযুক্ত হলেও, নকশা অনুযায়ী গাংয়ের ভিতরে (পূর্ব পাশ) সড়কের পাশে খাল রয়েছে। তবে বর্তমানে খালটি সড়কের পাশে নেই। বেশ কয়েক বছর আগে খালটি পশ্চিম পাশের সাথে সমান্তরাল রেখে খোদ্দ ব্রিজের নিচের অংশের পূর্ব পাশে নতুন করে খাল খনন করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
সম্প্রতি খোদ্দ ব্রিজ সংযুক্ত পূর্ব পাড় থেকে খোদ্দ গাংয়ের ভিতরে খালটির প্রায় অর্ধেক দখল করে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছেন আব্দুল মোতালেব ব্রিটিশ নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তার সম্পত্তিতে পুকুর তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। এতে গ্রীষ্ম মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ বন্ধ ও আসছে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বাঁধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকসহ স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। তারা বাঁধটি অপসারণ করে পানি প্রবাহমান রাখা ও খোদ্দ গাং খননের দাবি জানিয়ে বলেন, গাংটি খনন হলে উপকৃত হবে কয়েক হাজার কৃষক।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব ব্রিটিশের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গাংয়ের ভিতরে আমার ব্যক্তিগত ক্রয় ও উত্তরাধিকার সূত্রে ৩ একরেরও বেশি সম্পত্তি (ভূমি) রয়েছে। আমি কৃষকদের সুবিধার্থে তাদের সেচ কাজের জন্য এবং গাংয়ে পানি রাখার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনেক চেষ্টা করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি যে বাঁধ দিয়েছি। এতে কৃষকদের উপকার হবে। বর্তমানে যে দুইটি সেচে পানি ব্যবহার হচ্ছে, তাও আমার সম্পত্তির ভিতরে থাকা জমা পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামিতে নতুন বাঁধটির ভিতরেও অনেক পানি জমা থাকবে। খাল দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, বাঁধটি দেওয়ার কারণে পানি প্রবাহে কোন সমস্যা হবে না। বরং বাঁধটি দেওয়াতে খালের জন্য ভালো হবে। এখন বাঁধটি যেভাবে দিয়েছি, বর্ষায় আর সেভাবে থাকবে না।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক সুপারভাইজার মো. আবুল বাশার জানান, খাল দখল করে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম বলেন, সরকারি খালে কেউ বাঁধ বা রাস্তা তৈরি কিংবা স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
০৫ মার্চ, ২০২৪।