হাজীগঞ্জে ‘গম’ খাল ভরাটে জলাবদ্ধতা, ধানের জমিতে হাঁটু পানি

শত হেক্টর জমির ইরি-বোরো ধান নষ্টের আশংকা কৃষকদের!

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ডাটরা-শিবপুর গ্রামে ‘গম’ নামক খালটি দখল ও ভরাট করার কারণে মাত্র একদিনে বৃষ্টিতেই কয়েক হেক্টর ইরি-বোরো ধানের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছে। খাল দখলমুক্ত ও দখল ছাড়া অংশে খাল খনন এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির চার দিন পরেও এসব জমির পানি নামছে না। এতে শত-শত একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ডাটরা-শিবপুর হাজীগঞ্জের অন্যতম বড় কৃষি মাঠ। প্রতি বছর এ মাঠের শত শত একর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে। গ্রামের মধ্য দিয়ে ‘গম’ নামক খালটি পার্শ্ববর্তী শাহরাস্তি উপজেলার কিছু অংশে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে যার যার ইচ্ছেমতো খালটি দখল ও ভরাট করেই চলছেন খাল সংলগ্ন স্থানীয়রা। এতে করে মুষলধারে বৃষ্টি হলেই কৃষি মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।
গত ক’দিন আগে মাত্র একদিনের মুষলধারে বৃষ্টির পানি মাঠে জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে মাঠের নিচু জমিতে প্রায় হাঁটু পানি এবং উপরের জমিতে পানি জমে আছে। অথচ মাঠে জুড়ে রয়েছে কাঁচা-পাকা ও আধাপাকা ইরি-বোরো ধান। এমন অবস্থায় মাঠের কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, গাছ মরে কাঁচা ও আধাপাকা ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অথবা আবারো বৃষ্টি হলে মাঠের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়রা খাল সংলগ্ন নিজ নিজ বাড়ির ও সম্পত্তির সামনে খালটি ভরাট করে দখল নিয়েছেন। বিশেষ করে ডাটরা শিবপুর গ্রামের আঠিয়া বাড়ি ও মজুমদার বাড়ির অংশে এবং সংলগ্ন এলাকায় খালটি দখল করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়া দীর্ঘদিন খাল খনন ও সংস্কার না করায় ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। তাই এর প্রতিকার চেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে আব্দুল কাইয়ুম নামের স্থানীয় একজন শিক্ষক জানান, ডাটরা-শিবপুর মাঠের এ জলাবদ্ধতা মানবসৃষ্ট। মানুষ যেখানে-সেখানে বাড়ি-ঘর করেছেন। পুকুর, নালা ও খাল-বিল ভরাট করেছেন। এতে কৃষক ও ফসল দুটোরই ক্ষতি হচ্ছে। তাই খাল-বিল দখলমুক্ত করা প্রয়োজন এবং এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।
কথা হয় ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজার রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন এবং তিনি নিজেও দেখেছেন। মাঠে এখন যে পরিমাণ পানি আটকে আছে, এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আবারো বৃষ্টি হলে কিছুটা ক্ষতির আংশকা রয়েছে বলে জানান। এ সময় তিনি বলেন, তারপরও এই জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। যাতে করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমি গত রোববার সকালে জানতে পেরেছি। আমি এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তাৎখনিকভাবে জলাবদ্ধতার বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থাপন করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, খাল দখলের অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি বলেন, যদি খালটি সরকারি হয়ে থাকে তাহলে কারো দখলের কোন সুযোগ নেই।

২৯ এপ্রিল, ২০২২।