হাজীগঞ্জে ধর্ষক ও গর্ভপাতে জড়িত ৩ নারীর বিরুদ্ধে মামলা

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে ১৪ বছর বয়সি সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে ধর্ষক সিরাজুল ইসলাম (৬০) এবং গর্ভপাতে জড়িত তিন নারীসহ ৪ জনকে আটকের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
মামলার আসামি ধর্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের দাই বাড়ির মৃত আবিদ আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে উপজেলা হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের হাড়িয়াইন আড়ং বাজার সংলগ্ন এলাকায় সিরাজুল ইসলামের নতুন বাড়িতে বসবাস করছেন।
গর্ভপাতের সাথে জড়িত অপর তিন আসামি হলেন- সিরাজুল ইসলামের মেয়ে বকুল বেগম (২৮) ও পুত্রবধূ সীমা আক্তার (২৮) এবং আয়া নাজমা বেগম (৪৫)। ঘটনার দায় স্বীকার করায় এদিন দুপুরে অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে এবং ঘটনার শিকার কিশোরীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, এই ঘটনায় কিশোরীটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নং-২১/৭৬) করেছেন। এতে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম ছাড়াও আরো তিন নারীকে আসামি করা হয়েছে, যারা কিশোরীটির গর্ভপাত ঘটানোর সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় বৃদ্ধ ও অনৈতিক কাজের শিকার কিশোরীর ডিএনএ পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বুধবার অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হাজীগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে ইসলামীয়া মর্ডান হাসপাতালের আয়া নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এই নাজমা অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ও পুত্রবধূর সহায়তা কিশোরীর গর্ভপাত করায়। ওই কিশোরী ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র বাবা ও মায়ের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম কিশোরীকে একা পেয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ইসলামীয়া মর্ডাণ হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। আল্ট্রাসনোগ্রামে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রিপোর্ট এলে সিরাজুল ইসলামের পরিবারের লোকজন বিষয়টি আপোষের জন্য কিশোরীর পরিবারকে বল প্রয়োগ করে।
এরপর লোকলজ্জার ভয়ে এবং কিশোরীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি সমাধানের আশ^াসে বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের মেয়ে বকুলের ভাড়া বাসায় পৗরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের ফয়সাল ইসলামের নীচতলায় কিশোরিকে নিয়ে যায় বকুল ও সীমা আক্তার।
পরে ইসলামীয়া মর্ডাণ হাসপাতালের আয়া নাজমা বেগমকে বকুলের ভাড়া বাসায় ঢেকে নিয়ে কিশোরীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো হয় এবং গর্ভপাতকৃত অনাগত সন্তানকে মৃত অবস্থায় ওই ওয়ার্ডের গাজী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পৌরসভার ময়লা ফেলানো গাড়ির গ্যারেজে লুকিয়ে রাখে। বিষয়টি জানার পুলিশ সিরাজুল ইসলাম ও তার মেয়ে বকুল, পুত্রবধূ সীমা আক্তার ও আয়া নাজমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তিতে ওই গ্যারেজে রাখা একটি ময়লা ফেলানো ভ্যান গাড়ীতে রাখা বালতির ভিতর থেকে অনাগত সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার ও ভ্যান গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।

২৬ মার্চ, ২০২২।