হাজীগঞ্জে পুকুর খাল-বিল ও ডোবায় গিলে খাচ্ছে এলজিইডির সড়ক

অতিবৃষ্টি আর বর্ষার পানিতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি

প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা।
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ।
ওভারলোড যানবাহন চলাচল।
সড়ককে পুকুর পাড় হিসেবে ব্যবহার।

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এলজিইডির পাকা সড়ক পথ পুকুর আর খাল-বিল ও ডোবায় ধসে পড়ছে। সরকারি বিধি না মেনে সড়ক ঘেষে ব্যক্তি মালিকানায় পুকুর খনন আর সড়কের পাশে পুকুর এবং খাল-বিল থাকায় সড়কের এই ক্ষতি হচ্ছে। ফলে অসময়ে সড়ক ভেঙ্গে পড়ে রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে করে যানবাহনের সুষ্ঠু ও সহজ চলাচল ব্যহত হচ্ছে এবং প্রতি বছর গচ্চা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
এর কারণ হিসেবে অসময়ে (বর্ষা মৌসুমে বা শরতের শুরুতে) পুকুরসহ খাল-বিল ও ডোবার পানি নিষ্কাশন এবং সড়কে ওভার লোডের যানবাহন চলাফেরা করায় সড়কগুলো অসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান, উপজেলা এলজিইডি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মঞ্জুরুল আলম। তবে এর সাথে সড়কে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারকেও দায়ী করছেন সচেতনমহল।
জানা গেছে (২০১৯-২০ সালের তথ্য অনুযায়ী), হাজীগঞ্জ উপজেলায় এলজিইডি’র ৫৬৮.৯৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ২০০ কিলোমিটার পাকাকরণ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরো ৫০ কিলোমিটার পাকাকরণ সড়ক যোগ হবে। ফলে কাঁচা সড়ক থাকবে ৩৪৫.৯৫ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক বাদে উল্লেখিত পাকা সড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কম-বেশি ক্ষতি রয়েছে প্রায় ৯ কিলোমিটার (এলজিইডির তথ্য মতে)।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কগুলো ঘেষে বহুসংখ্যক পুকুর ও খাল-বিল রয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের প্রায় সবটুকুই পুকুর ও খাল-বিলের অংশ। এসব সড়কের অনেক জায়গা পুকুরে ধসে গেছে। আবার কোথাও গাছ উপড়ে পড়ে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই সড়কগুলোর মধ্যে নতুন সড়ক ও সংস্কারকৃত সড়কও রয়েছে। যা গত ক’মাস আগে মেরামত করা হয়েছে।
অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ এর ধারা ২৮ মোতাবেক নিজ ভূমির কমপক্ষে ১০ ফুট অভ্যন্তরে পুকুর বা জলাশয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সরকারি সড়কের কিনারা থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট দূরত্বে (জায়গা রেখে) পুকুর কিংবা জলাশয় খনন করতে হবে। কিন্তু উপজেলার কোথাও পুকুর পাড়ের ১০ ফুট দূরত্বে এলজিইডির সড়ক আছে কিনা, তা সন্দিহান।
এদিকে সড়ক রক্ষায় গাইডওয়াল নির্মাণে অনেক পুকুর মালিক বাঁধা দিচ্ছে বলে জানা যায়। হাজীগঞ্জ উপজেলায় এলজিইডি থেকে গত ক’বছরে অনেকগুলো গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণ হয়েছে। নতুন উদ্যোগে আরও কাঁচা সড়ক পাকাকরণ করা হচ্ছে এবং হবে। আগামিতে পর্যায়ক্রমে গ্রামীণ কাঁচা সড়কগুলো পাকাকরণ হবে। যদি নতুন করে নির্মাণের আগে পুকুর বা খাল-বিলের পাড়ের সমাধান করা না হয়, তাহলে প্রতি বছর সরকারকে বর্তমান সময়ের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা গচ্চা দিতে হবে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে অতিবৃষ্টির ফলে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়কের মধ্যে রুটিন মেইনটেন্সের অংশ হিসেবে ৯ কিলোমিটার এবং ব্যাপক ক্ষতির অংশ হিসেবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এলজিইডি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পরিদর্শন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপলো প্রকৌশলী কর্মকর্তার কার্যালয়।
এলজিইডি নির্মিত রাস্তার হাল নিয়ে উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল হাদি মিয়া এক বাক্যে জানান, আমার ইউনিয়নে এলজিইডি নির্মিত সড়কের প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইফসুফ পাটোয়ারী বলেন, দেবপুর রাজারগাঁও সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছ উপড়ে সড়কের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে। এলজিইডি প্রকৌশলীকে জানিয়ে কোন প্রতিকার হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটু জানান, আমার ইউনিয়নে এলজিইডি নির্মিত মোট সড়ক রয়েছে প্রায় ৭ কিলোমিটার। এই ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ভালো আছে ১ কিলোমিটার। নতুন করে টেন্ডার হয়েছে ১ কিলোমিটার। বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে এই ইউনিয়নের পাকা সড়কগুলো যানবাহন চলাচলে অনেকটাই অনুপযুক্ত।
উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিলিটারী জানান, আমার এলাকায় এলজিইডি নির্মিত সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার ইতোমধ্যে কিছু টেন্ডারও হয়েছে।
পুকুর বা খাল-বিলের অংশে দ্রুত সড়ক ধসে যাওয়ার কারণ হিসেবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম পাটওয়ারী বলেন, পুকুর ও ডোবায় মাছ চাষ এবং মাছের খাদ্য হিসেবে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়। এই সার প্রয়োগে মাটি নরম হয় এবং মাটি খায় এমন অনেক মাছ রয়েছে। যার ফলে সড়ক তাড়াতাড়ি ধসে বা ভেঙ্গে যায়। সরকারি সম্পদ রক্ষায় তিনিও এসবের প্রতিকার চান বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বিধি মোতাবেক সড়কের কিনারা থেকে কমপক্ষে ১০ ফুট জায়গা রেখে তবেই পুকুর খনন করতে হবে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব ও গুণগত মান বজায় থাকে। সেখানে পুকুর ও খাল-বিলগুলো সড়ক ঘেষা। পুকুর ও খাল-বিলের পাড় হিসেবে সরকারি সড়ক পথ ব্যবহার এবং সড়কে ওভারলোডেড যানবাহন চলাফেরা করায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সড়ক পথের।
২৭ অক্টোবর, ২০২০।