কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবিকে কেন্দ্র করে
হাজীগঞ্জ ব্যুরো
কুমিল্লা শহরের একটি পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবিকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে দুই কিশোরসহ ৩ জন নিহত ও ৪ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারের এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে নিহত ও আহতের বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪) ও একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫)।
আহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে মো. সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত ঠিকানার মিলন।
জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই দিন রাত আনুমানিক আটটার দিকে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের দিক থেকে হাজীগঞ্জ বাজারে দিকে একটি মিছিল বের আসে।
মিছিলটি হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ন জিউর আখড়ায় অবস্থিত পূজামন্ডপে সামনে আসলে মিছিল থেকে কে বা কারা পূজামন্ডপের গেটের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ মিছিলকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে মিছিলকারীরা।
এসময় মিছিলকারীর পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এদিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এবং পুলিশের গুলিতে তিন জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। এছাড়া মিছিলকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আলামিন ও বাবলু নামের দুইজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে এবং হৃদয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এছাড়া গুলিবিদ্ধ চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, নিহতের বিষয়টি জানা নেই। তবে মিছিলকারীদের হামলায় ১৭ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।
এদিকে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননা বিষয়ক খবরটি সরকার খতিয়ে দেখছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকলে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) এক তথ্যবিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গণমাধ্যমকে বলেছেন, খবরটি খতিয়ে দেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রমাণ মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননা বিষয়ক খবরটি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, ধর্মীয় সম্প্রতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে তথ্যবিবরণীতে। একই সঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
১৪ অক্টোবর, ২০২১।