হাজীগঞ্জে ভাতিজা হত্যার ঘটনায় আটক ২

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে ভাতিজা হত্যার ঘটনায় ঘাতক চাচী হাজেরা বেগম (৫০) ও চাচাতো বোন কুলসুমা বেগম (৩৩) কে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে রোববার দিবাগত রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। অপর ঘাতক চাচা শাহজাহান বকাউল (৫৫) ও চাচাতো ভাই বাবু (২৩) পলাতক রয়েছে।
গত রোববার বিকালে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ছয়ছিলা গ্রামের বকাউল বাড়িতে চাচা, চাচী, চাচাতো ভাই ও বোনের মারধরে ইদ্রিস বকাউল (৩৫) মারা যান। নিজ বাড়ির পুকুর সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত ইদ্রিস বকাউল ঘাতক শাহজাহানের আপন ভাতিজা।
নিহত ইদ্রিস বকাউল ওই বাড়ির প্রবাসী শহিদ উল্যাহ্ বকাউলের ছেলে। ঘাতক শাহজাহান একই বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের সাথে চাচা শাহজাহান ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম, মেয়ে কুলসুমা বেগম ও ছেলে বাবু জড়িত বলে জানান নিহতের বড় ভাই কুদ্দুস।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই কুদ্দুস বকাউল বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সাথে জড়িত উল্লেখিত চারজনকে মামলার আসামি করা হয়। এদিকে সোমবার দুপুরে নিহত ইদ্রিস বকাউলের (৩৫) জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে এদিন সকালে চাঁদপুর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে নিহত ইদ্রিস বকাউলের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে স্থানীয় ও এলাকাবাসীসহ কয়েক শতাধিক উৎসুক জনতার ভীড় জমে। এ সময় নিহতের পরিবারের আহাজারীতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এলাকাবাসী হত্যা এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহতের বড় ভাই কুদ্দুস বকাউল বলেন, রোববার বিকালে বাড়ির পুকুর সেচ দেওয়ার উদ্দেশে আমার ছোট ভাই ইদ্রিস শ্যালো মেশিন বসায়। এতে চাচা শাহজাহান, চাচি হাজেরা বেগম, চাচাতো বোন কুলসুমা বেগম ও চাচাতো ভাই বাবু বাধা দেয়। এ সময় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা চারজন মিলে ইদ্রিসের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে আমি বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাকিলা বাজারে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসি।
তারপর সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে, উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইদ্রিসকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে থানার এএসআই মাহমুদ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসেন।
এদিকে ইদ্রিস হত্যার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাড়িতে ছুটে যায়। পরে এলাকাবাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাতক শাহজাহান ও তার ছেলে বাবু পালিয়ে যায়। অপর ঘাতক শাহজাহানের স্ত্রী হাজেরা বেগম ও মেয়ে কুলসুমা বেগমকে তাদের নিজ ঘরে (হাজেরা মঞ্জিল) স্থানীয়রা অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আফজাল হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনি, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে পুলিশ ঘাতক হাজেরা বেগম ও কুলসুমা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনি জানান, নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন এবং এ ঘটনায় আটক দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

১২ মে, ২০২০।