হাজীগঞ্জে ভালো ফলনের পরও পাট চাষিদের লোকসানের আশঙ্কা

ভরা বর্ষায় মাঠে, খালে ও বিলে পানির সংকট, ভোগান্তিতে কৃষক

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
সিলেটে বন্যা হওয়ার পর চাঁদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার শঙ্কা থেকে মুক্তি পেলেও পানির সংকটে নতুন করে ভোগান্তি ও শঙ্কায় পড়েছেন চাঁদপুরের কৃষকরা। জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো হাজীগঞ্জেও ব্যতিক্রম নয়, চলছে প্রচ- দাবদাহ। পরিমাণ মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভরা বর্ষায় মাঠে, খালে-বিল ও নালায় পানি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত হয়নি।
ফলে প্রখর রোদে বিস্তৃর্ণ ফসলী জমির মাঠে পানি নেই। খাল-বিল, নালাও শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা। এখন অনেকের ক্ষেতেই পাট রোদে পুড়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। যারা উপায়ন্তর না পেয়ে পাট কেটেছেন, তারা অনেকে অপরিষ্কার ও অল্প পানিতে জাগ দিচ্ছেন। এতে পাটের রঙ কালচে ও শক্ত হওয়ার কারণে বাজারে কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়া এবং লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাট লাগানোর পর প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায়, এ বছর পাটের আবাদও বেড়েছে। সাধারণত পাট কাটার সময় হলে মাঠ, খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে যায়। কিন্তু এ বছর কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রখর রোদ থাকায় জমি থেকে পানি শুকিয়ে ও পানি নেমে যাবার কারণে এখন পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না।
কৃষকরা জানান, পাট জাগ দিতে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাত গভীর পানির প্রয়োজন হয়। যা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই মাঠে থাকে। কিন্তু এবার মাঠে পানি না থাকায় পাটের জমিতে জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে বিকল্প স্থানে বা পানি জমিয়ে জাগ দিচ্ছেন অনেকেই। ফলে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে কিংবা ভ্যানের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে বাড়তি সময় ও খরচের চাপ সইতে হচ্ছে তাদের। আবার মানসম্মত ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠে পানি না থাকায় বেশিরভাগ চাষি বিকল্প ব্যবস্থায় পাট পঁচাচ্ছেন। কেউ পাট কাটছেন, আবার কারো পাট জমিতে পড়ে থাকার কারণে লালচে হয়ে গেছে। এসময় চাষিরা জানান, এখন পাট কেটে দ্রুত পানিতে জাগ দেওয়ার কথা। কিন্তু মাঠে পানি না থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন তারা। সময়মতো পাট কেটে জাগ দিতে না পারলে পরবর্তীতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে আলু, সরিষা, সবজিসহ ইরি-বোরোর আবাদ।
বাকিলা ইউনিয়নের বোরখাল গ্রামের শাহজাহান নামের একজন কৃষক এক কানি (১২০ শতাংশ) জমিতে পাট চাষ করেছেন। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই সময় বিলে কোমর সমান পানি থাকে। তখন পাট জাগ দিয়ে টেনে এনে আঁশ ছড়াতাম। কিন্তু এবার বিলে পানি নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থায় পাট পঁচানোর ব্যবস্থা করেছি। এতে অতিরিক্ত শ্রম ও বাড়তি টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় পাট পঁচানোর কারণে মানসম্মত পাট পাওয়া যায়নি। পাটের রঙ সাধারণত সাদা, লালচে কিংবা সোনালী বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের পাট কালচে হয়ে গেছে এবং পাটও খুব শক্ত। তাই লোকসানের আশংকা করেন তিনি। একই কথা বলেন ওই এলাকার কৃষক মো. হারুন। তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন। সন্না গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ। তিনি ১৫ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছেন।
এদিকে পানির অভাবে পাট চাষিদের স্বপ্ন ও শ্রম যেন বৃথা না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছড়ানো ও পঁচানোর জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তারা। এছাড়া উন্নতজাতের পাটচাষেও উদ্বুদ্ধ করছেন বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলরুবা খানম। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুইদিন কথা হয় তাঁর সাথে।
তিনি বলেন, চলতি বছর হাজীগঞ্জে ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। প্রথমদিকে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠে ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই পাট পঁচানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন, আমরাও দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি। কারণ, সময়মতো পাঠ কেটে জাগ দিতে না পারলে, পরবর্তীতে আলু ও সরিষা আবাদের সমস্যা হতে পারে।
এসময় দিলরুবা খানম আরো বলেন, যেহেতু প্রকৃতিগত বিষয়। আমাদের তা মেনে নিয়ে বিকল্প পন্থা গ্রহণ করতে হবে। তাই পাটের আঁশ ছড়ানো ও পাট পঁচানের ক্ষেত্রে রিবন রেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করানোর প্রতি জোর দিচ্ছি আমরা। এ পদ্ধতি ব্যবহারে ইতোমধ্যে পাট চাষিদের উদ্ধুদ্ধ করার কাজ শুরু করেছি। এ বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে, আগামিতে রিবন রেটিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

০৩ আগস্ট, ২০২২।