হাজীগঞ্জে রোগীদের চরম দুর্ভোগ

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট


মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। ফলে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালটিতে কনসালটেন্টসহ ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৬ জন। এর মধ্যে ২ জন অননুমোদিত এবং ১ অনুমোদিত অনুপস্থিত। বাকি ১৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালটিতে উপজেলার প্রায় ৪ লাখ জনগোষ্ঠি সেবা নিয়ে থাকে। সম্প্রতি আবাসিক মেডিকেল অফিসার বদলি এবং ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে যথাযথ সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ছে এ অঞ্চলের গরিব ভুক্তভোগী মানুষগুলো।
এছাড়া হাসপাতালটি জেলার মধ্যবর্তী স্থান ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এবং রেলপথ, স্থলপথ ও নদীপথের সংযোগ থাকার কারণে পার্শ¦বর্তী উপজেলা কচুয়া, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, মতলব ও চাঁদপুর সদর এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার একাংশের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকার কারণে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
৬.৬৩ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। গত মার্চ মাসে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছেন ১২ হাজার ৩শ’ ৫২ জন রোগী। যার মধ্যে বহিঃবিভাগে ১০ হাজার ৪শ’ ৫২, জরুরি বিভাগে ১ হাজার ২শ’ ৬৪ ও অন্তঃবিভাগে ৬শ’ ৩৬ জন। এভাবে প্রতিমাসে গড়ে ১২ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, বতর্মানে হাসপাতালটিতে গড়ে নিয়মিত ৪৫-৬০ জন রোগী ভর্তি থাকে। আর প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৫০০ রোগী একং জরুরি বিভাগে ৫০-৭০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। যার মধ্যে অধিকাংশ রোগীই হচ্ছে, নারী ও শিশু এবং দুর্ঘটনাজনিত রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ জন চিকিৎসক। আবার ৬ জনের মধ্যে ৩ জন অনুপস্থিত রয়েছেন (অননুমোদিত ২ ও অনুমোদিত ১ জন)। অর্থাৎ সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক। ১৮ জনের পদ শূন্য রয়েছে। যার মধ্যে মেডিসিন, এন্যাসথেশিয়া, শিশু, অর্থো-সার্জারী, ইএনটি (নাক, কান ও গলা) এবং চক্ষুসহ ৬ জন জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য।
রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সহ ১০ জনের মধ্যে ৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য। যার মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (হাসপাতাল) ২ জন (১ জন অননুমোদিত অনুপস্থিত), মেডিকেল অফিসার (ইমারজেন্সী), মেডিকেল অফিসার (এন্যাসথেশিয়া) মেডিকেল অফিসার (প্যাথলজি) ও মেডিকেল অফিসার (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) ২ জন (১ জন অননুমোদিত অনুপস্থিত)।
৮ জন সহকারী সার্জন পদের মধ্যে পদ শূন্য রয়েছে ৬টি। কাগজে-কলমে ২ জন কর্মরত থাকলেও তারা নেই। ১ জন প্রেষণে কর্মরত চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যজন অনুমোদিত (ছুটি) অনুপস্থিত রয়েছেন। অর্থাৎ হাসপাতালে নেই কোন সহকারী সার্জন।
সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক রোগী টিকেট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। একইভাবে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে পরীক্ষাগার, জরুরি বিভাগ এবং চিকিৎসকদের চেম্বারের ভেতর ও বাইরে। যাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। এছাড়া নারী ও শিশু ওয়ার্ডে বেডের বাইরে এবং হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তিকৃত রোগী রয়েছেন।
টিকেট কাউন্টারের সামনে দেখা গেলো শিশুদের চিৎকার-চেচাঁমেচি ও কান্নার শব্দ এবং অপেক্ষারত রোগীদের বিরক্তি ও অস্বস্তি প্রকাশ। সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক এবং দু’জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।
ফার্মেসির সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শাহিন বেগম নামের একজন মায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেয়ে মিমের (২) সর্দি-কাঁশ ও মুখে ঘাঁ। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট সংগ্রহ করে ডাক্তার দেখিয়েছেন।
টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাজুদা বেগম (৫৫) নামের একজন নারী জানান, শরীর ব্যাথা ও জ্বর নিয়ে দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এখনো টিকেট কাটতে পারেননি তিনি।
চিকিৎসা নেয়া খোরশেদ আলম (৩৮) নামের একজন রোগী জানান, নারীদের চেয়ে পুরুষ লাইনে ভিড় কম। তাই টিকেট সংগ্রহ করতে সময় লাগেনি তার। তিনি বলেন, এসেছি বড় চিকিৎসক দেখাতে, কিন্তু সেবা নিয়েছি একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে। অবিলম্বে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল আজিম বলেন, প্রতিদিনই রোগীর চাপ থাকে। এখানে গড়ে ৬শ’ রোগী চিকিৎসা নেয়। তাছাড়া হাসপাতালটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দুর্ঘটনাজনিত রোগী বেশি। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জরুরিভিত্তিতে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট মেডিসিন, এন্যাসথেশিয়া, শিশু, অর্থো-সার্জারী ও মেডিকেল অফিসার (ইমারজেন্সী) প্রয়োজন। তাছাড়া কয়েকমাস হলো নতুন এ্যাম্বুলেন্স পেয়েছি, কিন্তু চালকের পদটি শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।