হাজীগঞ্জ পৌরসভায় ১১৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

নতুন করারোপ ছাড়াই পৌরসভার ইতিহাসে বৃহত্তম বাজেট

হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জ পৌরসভার ইতিহাসে নতুন করে কোনো করারোপ ছাড়াই বিগ (বৃহত্তম) বাজেট ঘোষণা করেছেন পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) পৌরসভার সভাকক্ষে পৌর পরিষদ, সাংবাদিক ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে তিনি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট ঘোষণা করেন।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছানের সভাপতিত্বে এ দিন দুপুরে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন তাঁর টানা দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সপ্তম বাজেট হিসাবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ১১৪ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ২৫০ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। যা গত অর্থ বছরের (২০২১-২০২২) চেয়ে ৫২ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৫০ টাকা বেশি।
জানা গেছে, পৌর মেয়রের ঘোষিত বাজেটে ১১৪ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ২৫০ টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যে নিজস্ব (রাজস্ব) খাতে আয় ধরা হয়েছে, ২৭ কোটি ৯ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা। তার মধ্যে নিজস্ব রাজস্ব আয় ২১ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা এবং পানির রাজস্ব আয় ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
রাজস্ব খাতে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে নিজস্ব রাজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং পানির রাজস্ব ব্যয় ৫ কোটি ৫৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
রাজস্ব আয়ে মোট উদ্বৃত্ত থাকবে ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব তহবিলে ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৫০ টাকা ও পানির রাজস্বে ৪২ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে।
অপর দিকে উন্নয়ন খাতে সর্বমোট আয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন তহবিল ৫ কোটি ২৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫’শ টাকা, মূলধন তহবিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (ইউজিআইআইপি) ৬০ কোটি ৪৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (বিএমডিএপ, এমজিএসপি) ৩ কোটি ৪৫ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো ৯ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা রয়েছে।
উন্নয়ন খাতে মোট ব্যয় হবে ৮৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন তহবিল ৫ কোটি ৫০ হাজার টাকা, মূলধন তহবিল ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, প্রকল্প হিসাব (ইউজিআইআইপি) ৫৯ কোটি ১ লাখ টাকা, প্রকল্প হিসাব (বিএমডিএপ, এমজিএসপি) ৩ কোটি টাকা, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো ৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ৪ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।
উদ্বৃত্ত থাকবে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন তহবিল ২৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫শ’ টাকা, মূলধন তহবিল ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (ইউজিআইআইপি) ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (বিএমডিএপ, এমজিএসপি) ৪৫ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাও. মাহবুবুর রহমান। এরপর বক্তব্য রাখেন পৌর প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ জাহিদুল আযহার আলম বেপারী, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান।
বাজার পরিদর্শক খাজা সাফিউল বাসার রুজমনের পরিচালনায় এরপর বাজেট সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান, খালেকুজ্জামান শামীম, কামরুজ্জামান টুটুল, মহিউদ্দিন আল আজাদ, খন্দকার আরিফ, এনায়েত মজুমদার, মনিরুজ্জামান বাবলু, মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, সাইফুল ইসলাম সিফাত, জহিরুল ইসলাম জয় প্রমুখ।
এসময় প্যানেল মেয়র আজাদ হোসেন মজুমদার ও রোকেয়া বেগম, কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন মিয়াজী, আলাউদ্দিন মুন্সী, মোহাসীন ফারুক বাদল, সুমন তপাদার, মো. শাহআলম, কাজী মনির হোসেন, কাজী কবির হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, সাদেকুজ্জামান মুন্সী, মো. শাহআলমসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাজেট টুকিটাকি

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
প্রধান আয়ের খাত (রাজস্ব ও উন্নয়ত তহবিল)ঃ রাজস্ব আয়ের মধ্যে পৌর কর, ব্যবসা লাইসেন্স ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর, পৌর হাট-বাজার ইজারা, বাস, সিএনজি ও ট্রাক স্ট্র্যান্ড ইজারা, বালুর ঘাট ইজারা, রোলার ভাড়া, দোকান বরাদ্দের সেলামী (অগ্রিম) ও ঘরভাড়া। উন্নয়ন তহবিলের মধ্যে সরকার কর্তৃক উন্নয়ন সহায়তা মঞ্জুরী, অতিরিক্ত বরাদ্দ, থোক বরাদ্দ, বিশেষ বরাদ্দ, ইউজিআইআইপি, বিএমডিএফ (এমজিএসপি), গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো ও জলবায়ু পরিবর্তন উন্নয়ন প্রকল্প।
প্রধান ব্যয়ের খাত (রাজস্ব ও উন্নয়ন তহবিল)ঃ রাজস্ব ব্যয়ের মধ্যে সম্মানী ও বেতন ভাতা, রাজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প কাজ, বিদ্যুতের মালামাল ক্রয়, বিদ্যুতের লাইন সম্প্রসারণ, পানির ফোয়ারা নির্মাণ ইত্যাদি এবং উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ-কালভার্ট, ড্রেন ও গণ-সৌচাগার নির্মাণ ও সংস্কার, সুপার মার্কেট ও হকার্স মার্কেট নির্মাণ ও সংস্কার, গোরস্তান ও কসাইখানা নির্মাণ ও উন্নয়ন ইত্যাদি।
ড্রেন নির্মাণ ও সৌন্দর্য্যবর্ধণে অগ্রাধিকারঃ প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপনের পক্ষে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছান সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, পৌরসভা এলাকায় নতুন করে রাস্তা নির্মাণ তেমন একটা বাকি নেই। তাই ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ড্রেন নির্মাণ ও পৌর এলাকায় সৌন্দর্য্যবর্ধণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
যানজট নিরসনে বাইপাস সড়ক অগ্রাধিকারঃ হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইপাস সড়ক অথবা বাজারের উপর দিয়ে ওভারব্রিজ (ওড়াল সড়ক) নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুইটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম। এই প্রস্তাবনা দুইটির মধ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভা বাইপাস সড়ক নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিবে বলে জানান পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে একজন সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৭ তলা ভবন নির্মাণ ও ময়লা-আবর্জনা ড্রাম্পিংঃ হাজীগঞ্জ বাজারের ময়লা-আবর্জনা আরো বেশি দ্রুততার সাথে অপসারণ ও ময়লা আবর্জনা ড্রাম্পিং এবং পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন পরিস্কারকরণে পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৭ তলা ভবন নির্মানে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানান, পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন।
এই প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়নি। যদি বাজেটে এই প্রকল্পটি সংযুক্ত করা হতো, তাহলে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার প্রায় দুইশ কোটি টাকা হতো জানান, পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন।
আরো একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণঃ হাজীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় আরো একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পানি শোধনাগার প্রকল্প) স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান, পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান।
এর আগে ২০২১ সালের জুন মাসে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন পৌর কবরস্থানের পাশে নির্মিত সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের উদ্বোধন করা হয়। ওই সময়ে নতুন করে বিভিন্ন আকার বা সাইজের প্রায় ৩১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এই প্লান্টের মাধ্যমে দৈনিক ৪৩ লাখ ২০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ ও সুপেয় করা হয়।

০১ জুলাই, ২০২২।