হাজীগঞ্জ স্বর্ণকলি সপ্রাবিতে বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকে স্কুলের মাঠ

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
প্রতিবছর বর্ষায় এলেই প্রায় ৪ মাস ধরে বন্ধ থাকে শারীরিক কসরতসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা। এছাড়া দীর্ঘদিন জমে থাকায় সেই পানি যখন নোংরা পানিতে পরিণত হয় তখন মশা ও পোকা-মাকড় জন্মে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসাটা দুরুহ হয়ে পড়ে। তাছাড়া স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরদেরও বৈকালিন সময়ের খেলাধুলা বন্ধ থাকে। বলছি, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৮নং ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামের স্বর্ণকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে টোরাগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ঐ ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় ৩৫ বছরের পুরানো উপজেলার প্রথম ও তৎকালীন সময়ে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণকলি কেজি স্কুল এবং ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজীগঞ্জ স্বর্ণকলি হাই স্কুল। তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ শতাধিক শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থী রয়েছে। যদিও করোনা মহামারির কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সংখ্যা কিছুটা কম রয়েছে।
সম্প্রতি সরজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের মাঠটিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত খেলাধুলা ও শারীরিক কসরত করতো। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সব খেলাধুলার প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হতো এই মাঠটিতে। তাছাড়া স্থানীয় ও এলাকার শিশু-কিশোরেরা প্রতিদিন বৈকালিন সময়ে এই মাঠেই খেলাধুলা করতো এবং যুবকরা অবসরকালীন বিকালে বেলায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা দেখে সময় কাটাতো।
কিন্তু বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত তারা। বিদ্যালয় তিনটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে প্রায় ১ ফুট নিচু অবস্থানে এবং বিদ্যালয়ের আশপাশের পুকুরসহ বিভিন্ন নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া সাবেক হামিদিয়া জুট মিলসের পিছনে অবস্থিত বিশাল আকারের দিঘীটি (বড় পুকুর) ভরাট হয়ে যাওয়ায় গত দুই-তিন বছর ধরে বর্ষার প্রায় ৪ মাস বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতা থাকে।
স্বর্ণকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী শান্ত ইসলাম ও সোহা আক্তার জানান, মাঠে পানি থাকার কারণে আমরা খেলাধুলা করতে পারি না।
হাজীগঞ্জ স্বর্ণকলি হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামিম আহমেদ শিহাব জানান, মাঠে পানি থাকার কারণে শারীরিক কসরতসহ খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত তারা।
স্থানীয় একজন অভিভাবক ও ব্যবসায় মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু হয়ে গেছে। এলাকার পুকুর ও নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি হলেই মাঠটিতে পানি জমে যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবরের কিছু সময় পর্যন্ত মাঠটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাই মাঠ ভরাটসহ পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের পিটিআই কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জহির জানান, মাঠটির অবস্থান থেকে আশপাশের স্থান বেশ কিছুটা উঁচু। তাছাড়া এই এলাকার একটি বড় পুকুর ভরাট এবং আশপাশে এলাকায় বসতবাড়ি নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। যার ফলে মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, প্রতি বছর পৌরসভা থেকে পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রায় সময় স্থানীয়দের বাঁধাগ্রস্তের কারণে পাইপ দিয়ে পানি নামতে পারে না। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠ ভরাটসহ বর্ষার পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল জানান, গত দুই বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাটি দিয়ে ভরাট করা ছাড়া মাঠের এই জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। তাই মাঠটি উঁচু করতে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পরামর্শক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, গত সপ্তাহে আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি এবং শিক্ষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, মাঠটি আশপাশের স্থান থেকে অনেকটা নিচু। তাই মাঠ ভরাটের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।

০৫ অক্টোবর, ২০২১।