৫ বছরে জেলা যুব সংহতির ৪টি আহ্বায়ক কমিটি

বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ও ভূমিদস্যু সদস্য সচিব

ইলশেপাড় রিপোর্ট
গত ৫ বছরের (২০১৫ থেকে ২০২০ সাল) মধ্যে চাঁদপুর জেলা যুব সংহতির ৪টি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চাঁদপুরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কোন সমন্বয় না করে কেন্দ্রিয় জাতীয় পার্টির নেতা এমরান হোসেন মিয়া এককভাবে প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্রিয় যুব সংহতির নেতৃবৃন্দের সাথে আঁতাত করে একের পর এক কমিটি ঘোষণা দিচ্ছেন। এতে করে চাঁদপুরে শান্তির জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
জানা যায়, গত ৭ নভেম্বের ছিলো জেলা যুব সংহতির সম্মেলন। এ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পরও অতিথিদের নাম আগে-পিছে হওয়ায় চাঁদপুরের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সেই সম্মেলন কেন্দ্র থেকে স্থগিত করা হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা যুব সংহতির ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে দল থেকে বহিষ্কৃত গোলাম নবী লিটনকে আহ্বায়ক ও ভূমিদস্যু মো. হান্নান ঢালীকে সদস্য সচিব এবং ফেরদৌস খানকে সমন্বয়কারী করা হয়। অথচ ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহাবুব পাটওয়ারীর ছেলে হাজি গোলাম মোস্তফা নিঝুম পাটোয়ারীকে আহ্বায়ক ও কেন্দ্রিয় ছাত্র সমাজের সাবেক সদস্য মো. নাজমুল গাজীকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া ২০১৭ সালের ২৮ জুন একসময়ের ছাত্রদল নেতা চাঁদপুর সরকারি কলেজে ইভটিজিংয়ের দায়ে কলেজ থেকে বহিস্কৃত মো. ফেরদৌস খানকে আহ্বায়ক ও হাজি গোলাম মোস্তফা নিঝুম পাটোয়ারীকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় হয়েছিলো। এর আগে অনুমানিক ২০১৫ সাথে মো. রফিক খানকে আহ্বায়ক ও নাজির হোসেন লিটন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী জানান, চাঁদপুরের জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে এমরান হোসেন মিয়া। কেন্দ্রিয় জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দের তৈলমর্দন করে কেন্দ্রিয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। কেন্দ্রিয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি এমরান মিয়া জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। এমরান হোসেন মিয়ার সামনে যারা ‘জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর’ করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা চেষ্টা করছেন তিনি। অথচ যারা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জড়িত রয়েছেন তাদের বাদ রেখে তিনি কমিটি গঠন করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখছেন। নেতাকর্মীরা বলেন, আমরা এমরান হোসেন মিয়ার দল করি না, আমরা দল করি মরহুম হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদিরের। আমরা এমরান মিয়ার বেতনভুক্ত কোন কর্মচারী নই, যে তার সামনে ‘জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর’ বলবো। আমরা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে দল করি।
নেতাকর্মীরা আরো জানান, ২০১৭ সালের ২৮ জুন এমরান হোসেন মিয়া কেন্দ্রিয় যুব সংহতি নেতৃবৃন্দের সাথে আঁতাত করে মো. ফেরদৌস খানকে আহ্বায়ক ও হাজি গোলাম মোস্তফা নিঝুম পাটোয়ারীকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস খান চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়া অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। তখন কলেজের এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের দায়ে তাকে কলেজ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারের পর মো. ফেরদৌস খান আর কোন কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। এছাড়া চলতি বছরের নভেম্বর মসের শেষ দিকে জাতীয় পার্টির এক নেতার মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানের কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়ার দায়িত্ব পান মো. ফেরদৌস খান। দায়িত্ব পেয়ে মো. ফেরদৌস খান সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়ার টাকা না দিয়ে সেই টাকা ফেরদৌস খান আত্মসাৎ করেন। পরে কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষে চাপে পড়ে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন তিনি।
এছাড়া গত ১৫ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা যুব সংহতির ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই ঘেষিত কমিটি সভাপতির স্বাক্ষরে অনুমোদন দেয়া হয়। অথচ গঠনতন্ত্রে কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সভাপতি সুপারিশ করবে এবং সাধারণ সম্পাদক তা অনুমোদন দিবেন। এই কমিটির ক্ষেত্রে শুধু সভাপতির স্বাক্ষর রয়েছে, সাধারণ সম্পাদকের কোন স্বাক্ষর নেই। ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম নবী লিটন চাঁদপুরে চিহ্নিত নেশাখোর ও দল থেকে বহিষ্কৃত। গোলাম নবী লিটন চাঁদপুর জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি দায়িত্বে থাকাকালীন সময় দলের শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কার আদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এছাড়া সদস্য সচিব মো. হান্নান ঢালী নামে ভূমিদস্যু অভিযোগ রয়েছে। এ কমিটিতে সমন্বয়কারী হিসেবে মো. ফেরদৌস খানকে রাখা হয়েছে। অথচ যুব সংহতির গঠনতন্ত্রে সমন্বয়কারী কোন পদ নেই।
বিগত যুব সংহতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক/সদস্য সচিবরা জানান, আমাদের কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে আমরা বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছি। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো। সেই সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতিও শেষ করি। কিন্তু সম্মেলনের পোস্টারে এমরান হোসেন মিয়ার নাম আগ-পিছ হওয়ায় আগের দিন রাত (৬ নভেম্বর) তার হস্তক্ষেপে সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। এমরান হোসেন তাবেদারি করে কোন রাজনীতি করবো না। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি না। আমরা পরিবার থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত।
তারা আরো জানান, আমাদের কমিটি কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সভাপতি মো. আলমগীর সিকদার লোটন ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফখরুল আহসান শাহ্জাদা স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ গত ১৫ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা যুব সংহতির ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় তাতে কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সভাপতির স্বাক্ষর থাকলেও সাধারণ সম্পাদকের কোন স্বাক্ষর নেই। গঠনতন্ত্র মোতাবেক সভাপতি একক ক্ষমতাবলে কোন কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন না। সেই ক্ষেত্রে গত ১৫ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা যুব সংহতির ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট যে আহ্বায়ক কমিটি অবৈধ।
কেন্দ্রিয় ছাত্র সমাজের সাবেক এক নেতা জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সভাপতি সুপারিশ করবে এবং সাধারণ সম্পাদক তা অনুমোদন দিবেন। অথচ এ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের কোন স্বাক্ষর নেই। আমার মতে এ কমিটির কোন বৈধতা নেই, অর্থাৎ অবৈধ। একটি চক্র কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে টু-পাইস দিয়ে তার পকেটের লোকজনদের দিয়ে কমিটি গঠন করে দলকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। গোলাম নবী লিটন চাঁদপুর জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি দায়িত্বে থাকাকালীন সময় দলের শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। তাহলে তিনি কিভাবে জেলা যুব সংগতির মতো একটি কমিটির আহ্বায়ক হন। যুব সংহতির গঠনতন্ত্রে সমন্বয়কারী কোন পদ নেই। অথচ এ কমিটিতে মো. ফেরদৌস খানের নাম সমন্বয়কারী হিসেবে রাখা হয়।
কেন্দ্রিয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফখরুল আহসান শাহ্জাদার সাথে যোগাযোগ করলে তার ব্যবহৃত (০১৭১২-৮—০১ ও ০১৭২৪-৯—৭১) নম্বর দু’টি বন্ধ পাওয়া যায়।
২৭ ডিসেম্বর, ২০২০।