চাঁদপুর মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের উদ্যোগে ‘ওরিয়েন্টশন অন পেডিয়াট্রিক প্রাইমারী আই কেয়ার ফর ফ্রন্টলাইন হেলথ ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তায় ন্যাশনাল চাইল্ডহুড ব্লাইন্ডনেস প্রজেক্ট (এনসিবিপি) এর আওতায় ঐ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং হাসপাতালের চীফ কনসালটেন্ট ডা. মো. আনোয়ার হোসেন শেখের সভাপতিত্বে চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে হাসপাতালের চীফ কনসালটেন্ট প্রান্তিক পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের গৃহিত কর্মসূচির বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালটি জনসচেতনতা, রোগ প্রতিরোধ এবং উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে দাতা সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে যথোপযুক্ত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি এ ধরনের কর্মশালা আয়োজনের জন্য দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। দীর্ঘস্থায়ী ও পরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্ধত্ব মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে হাসপাতালের ম্যানেজার (প্রশাসন) শামীম খানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক অফথালমোলজিস্ট ডা. মো. জহির উদ্দিন। তিনি হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে সবাইকে জানান।
বক্তারা বলেন, হাসপাতালটি অন্ধত্ব নিবারণে বিশেষ করে শিশু অন্ধত্ব নিরসনে এই অঞ্চলে বিনামূল্যে স্কুলসাইট টেস্টিং পোগ্রাম এবং ভ্রাম্যমাণ চক্ষু চিকিৎসা শিবির, প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ যেভাবে সেবার ধরন প্রসার করে আসছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দক্ষ জনবল সমৃদ্ধ হাসপাতাল সেবা নিশ্চিত করে আসছে, তার ফলে আগামিতে এই অঞ্চলে অন্ধত্বের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
কর্মশালায় সভাপতি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের প্রতিটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিশুদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি প্রশিক্ষনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি সদয় আহ্বান জানান এবং দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল এবং হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের সব সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চোখের গঠন ও কাজ এবং চোখের বিভিন্ন রোগ এবং দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ও চক্ষু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করেন হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মো. রাশেদুর রহমান তালুকদার। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ব্যাগ, স্বাস্থ্য সহায়িকা, ফ্লিপ চার্ট, ভিশন চার্ট ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সময় হতেই চাঁদপুর ও আশপাশের জেলাসমূহে অন্ধত্ব নিবারণ, দূরীকরণ এবং চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে পরিগণিত ছিল। ১৯৮২ সালে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি চাঁদপুর জেলাসহ এর পার্শ¦বর্তী জেলাসমূহে ভ্রাম্যমাণ চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। হাসপাতালটি চলতি বছরের জুন পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে ১১,৭৪,৫৮৮ জন রোগীকে বহিঃর্বিভাগ এবং ৯২,৫০৭ জন রোগীকে অন্তঃবিভাগে অপারেশন সেবা প্রদান করেছে। অন্ধত্ব নিবারণে সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আন্ধেরী হিলফি জার্মানী, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন, ডাচ বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ১,১২২টি ভ্রাম্যমাণ চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে ১১,৪০,১২২ জন রোগীকে বহিঃর্বিভাগ চিকিৎসা এবং ১,২০,৫৩৮ জন চক্ষুরোগীকে ছানি অপারেশন সেবা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় জুন পর্যন্ত ১,১৮৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫,৪১,৯৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চশমা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে এবং ওরিয়েন্টেশন ফর ফ্রন্টলাইন হেলথ ওয়ার্কার্স শীর্ষক প্রোগ্রামের আওতায় ১১টি কর্মশালার মাধ্যমে ৭১০ জন সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ উপকরণসহ প্রাথমিক চক্ষু স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের দোরগোড়ায় চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে লক্ষীপুর জেলার সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কমলনগনর উপজেলায় এবং চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর এবং কচুয়া উপজেলার সাচারে সর্বমোট ৬টি প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র তথা ভিশন সেন্টার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০।