চাঁদপুর শহরে বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ!

এসএম চিশতী
ব্র্যান্ডিং জেলা, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর আজ একটি সুপরিচিত নাম। কিন্তু, শতাধিক বছরের প্রাচীন এই চাঁদপুর শহরের বর্জ্য অপসারণের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শহরটিতে বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি এবং মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এ শহরের পরিবেশ!
প্রায় দশ যুগ অতিবাহিত হলেও বর্জ্য অপসারণে চোখে পরার মতো স্থায়ী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি চাঁদপুর পৌরসভা। তাই যুগের পর যুগ এ শহরের সাধারণ মানুষ যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জ্যনা ফেলছে। আবার শহরের বাসা-বাড়ি, হোটেল এবং হসপিটাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও এসব ময়লা ফেলছেন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এতে করে যেমনি বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি, তেমনিভাবে মারাত্মক দূষিত হচ্ছে চাঁদপুর শহরের পরিবেশ।
সরেজমিনে চাঁদপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্পটে দেখা যায়, যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পৌরসভার অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, জনবহুল এলাকা ও রাস্তার পাশে থাকা এসব বর্জ্য থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধ এবং দূষিত হাওয়া পথচারীসহ পৌরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন বর্জ্য ফেলা স্ব-স্ব এলাকার ব্যবসায়ীরা। যেমন চিত্রলেখার মোড়ে সব সময় ময়লা জমানোর কারণে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছেন না এখানকার ব্যবসায়ীরা। নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধের কারণে ক্রেতারা অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই দ্রুত চলে যান কেনা-কাটা না করে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডের বাসিন্দা বিশিষ্টি ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্জ্য থেকে নির্গত দুর্গন্ধের কারণে যেমন বাসা-বাড়িতে থাকা যায় না, তেমনই রাস্তা দিয়ে হাঁটাও যায় না। সব থেকে কষ্ট লাগে যখন দেখি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বর্জ্য বা ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে ছুটাছুটি করে। যেমন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ও হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঝখানে, আল-আমিন একাডেমির মূল ক্যাম্পাসের পাশে এবং আল-আমিন একাডেমির ছাত্রী শাখার ঠিক সামনে বর্জ্য রাখা কতোটা বেদনাদায়ক হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়! এছাড়া কোর্ট স্টেশন, পৌর ঈদগাহের পাশে ও বিপণীবাগ বাজারে বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়।
চাঁদপুর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ৯.৮৯ বর্গমাইলের চাঁদপুর পৌরসভায় প্রায় পৌনে দু’লাখ মানুষ বসবাস করছে। পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বলে, সব মানুষের আধুনিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চাঁদপুর পৌরসভা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণে প্রায় চার শতাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। আর বাসস্ট্যান্ড স্বর্ণখোলা রোডে শহরের সবধরনের বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় স্থায়ী বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা কেন নেই? এমন প্রশ্নে তিনি বিব্রতবোধ করেন। অবশেষে তিনি বলেন, আশা করা যায়, তারুণ্যের অহংকার, নবনির্বাচিত বর্তমান মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন সমস্যা নিরসন করে পৌরসভার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দূষণমুক্ত পরিবেশ উপহার দিবেন।
বর্তমান মেয়র একটি মেগা প্রকল্প ও ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান করবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করেন সচেতন মহল।
২৫ নভেম্বর, ২০২০।