এস এম সোহেল
চাঁদপুর-নড়িয়া নৌ-পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহি ছোট লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে একজন ডাকাত সদস্য আটক করেছে লঞ্চের যাত্রীরা। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শরীয়তপুর জেলার নৌ-সীমানার কাচিকাটা ও মান্দের বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে মেঘনা নদীতে নড়িয়া থেকে চাঁদপুর অভিমুখে ছেড়ে আসা শাহ আলী-৪ লঞ্চে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় শরীয়তপুর জেলার নৌ-সীমানার কাচিকাটা ও মান্দের বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে মেঘনা নদীতে নড়িয়া থেকে চাঁদপুর অভিমুখে ছেড়ে আসা শাহ আলী-৪ লঞ্চে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ২টি স্প্রিটবোডযোগে এসে লঞ্চে উঠে কয়েক মিনিটের মধ্যে ডাকতি কাজ শেষ করে দ্রুত সট্কে পরে। একজন ডাকাত পালিয়ে যেতে না পারলে লঞ্চের যাত্রীরা তাকে হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দিয়ে চাঁদপুর নৌ-থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
লঞ্চের যাত্রী কুমিল্লার কালিয়াজুরির নিলুফা বেগম, বোন মাকসুদা বেগম, মেয়ে সীমা আক্তার, বোন ছেলে জুবায়ের, জিহাদ, রামগঞ্জের মো. আল আমিন, পুরান বাজারের মো. উজ্জল, ভাগিনা মো. জনি মুন্সি, রামগঞ্জের কোহিনুর বেগম, মেয়ে সাদিয়া, ছেলে আল আমিন, নাতি জিহাদ, নড়িয়ার বেনী মাধব পাল, পুত্রবধূ পিংকি পাল, পিউস ও সীয়া নামের যাত্রীরা জানায়, নড়িয়া থেকে লঞ্চ ছাড়ার পর সুরেশ্বর ঘাট ধরে। তারপর লঞ্চ ছাড়ার ৩০ মিনিট পর কাচিকাটা ও মান্দের বাজারের মাঝামাঝি স্থানে আসলে দু’টি স্প্রিটবোডযোগে ১৮ জন ডাকাতের দল লঞ্চে ওঠে। ডাকাতরা লঞ্চে উঠে প্রথমে জানালার গ্লাসগুলো ভাংচুর করে। তারপর যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। তারপর নারী যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মাকসুদা বেগম জানান, তারা নড়িয়ায় মেয়ে সীমার বড়ি থেকে বেড়ানো শেষ করে মেয়েকে নিয়ে কুমিল্লার কালিয়াজুরি বাড়িতে যাবার জন্য লঞ্চে করে চাঁদপুর আসছিলেন। তাদের গলা, কান ও হাতে থাকা স্বর্ণালংকার দিতে না চাইলে ডাকাতরা তার বোনের ছেলে শিশু জিহাদ (৫) কে নদীতে ফেলে দিতে চাইলে প্রাণভিক্ষা চেয়ে স্বর্ণালংকার দিয়ে জিহাদকে ফিরিয়ে আনে।
শাহ আলী-৪ লঞ্চের মাস্টার মো. হেলাল উদ্দীন জানান, সকাল ৮টায় নঠিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে ৬০/৬৫ জন যাত্রী নিয়ে আমরা চাঁদপুরের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে আসি। সকাল পৌনে ১০টায় লঞ্চটি মান্দের বাজারের কাছা কাছি আসলে দু’টি স্প্রিটবোডযোগে ডাকাত দলের সদস্যরা লঞ্চ ঘিরে ফেলে। লঞ্চে উঠে তারা যাত্রীদের জিম্মি করে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
কয়েকজন যাত্রী আরো জানায়, ডাকাত সদস্যরা শটগান, পিস্তল ও দেশীয় ধারালো যাত্রীদের গলায় ধরে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ও দামী মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা সবাই পালিয়ে গেলেও একজন ডাকাত লঞ্চে থেকে যায়। যাত্রীরা তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছলে যাত্রীদের হাতে আটক ডাকাতকে নৌ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আটক ডাকাত বিল্লাল হোসেন খান জানায়, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার খুরুমখালি গ্রামে। সে ওয়াপদায় চাকরি করে। বর্তমানে সে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন রাস্তায় বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। সে আরো জানায়, কাচিকাটা কিবরিয়ার নেতৃত্বে ১৮ জন ডাকাতির সাথে জড়িত। তারা প্রথমে রাতে বিল্লালদের মাটি কাটার সাইডে ডাকাতি করেছে। তখন তাকে সেখান থেকে কিবরিয়া তার স্প্রিডবোডে তুলে নেয়।
চাঁদপুর নৌ-থানার এসআই জহিরুল ইসলাম বলেন, শাহ আলী-৪ লঞ্চটি সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর ঘাটে এসে পৌঁছায়। পরে এসআই জয়নাল ডাকাত সদস্যকে থানায় হস্তান্তর করে। ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার আক্তার হোসেন মামলা করেছেন। আটক ডাকাত সদস্য থানা হেফাজতে রয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, লঞ্চে থাকা নৌ পুলিশের এসআই জয়নাল মো. বিল্লাল খান নামে ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়। তার বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পাইন্দি নতুন মহল্লায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১ম সাসে এটিসহ চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে নারায়নগঞ্জ থেকে মতলবের মধ্যে চলাচলকারী দু’টি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দুই ডাকাতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
২২ ডিসেম্বর, ২০২০।