নারায়ন রবিদাস
ফরিদগঞ্জে নিজের-স্ত্রী সন্তানকে রেখে পরকীয়া প্রেমিকা ও বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া নয়ন দাস (২৭) নামে এক যুবকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে চারটি পরিবার তচনছ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিবারের মধ্যে নয়ন দাসের পরিবার, তার স্ত্রী সীতা রানী দাসের (২২) বাপের বাড়ির পরিবার, তার মামার পরিবার এবং নয়ন দাসের পরকিয়া প্রেমিকা ও বড় ভাই অজিত দাসের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দাসের (২০) বাবার পরিবার। কারণ, ইতোমধ্যে নয়ন দাসের বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা দাস প্রেমের অভিনয় করে অপহরণ করে ধর্ষণ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় পরকীয়া প্রেমিক নয়ন দাস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে নয়ন দাসের স্ত্রী সীতা রানী, সীতার ভাই লিটন দাস (২৪) এবং মামা আইনজীবী সহকারী পরেশ চন্দ্র দাস (৪৫) কে। পুলিশ অভিযুক্ত নয়স দাস, তার স্ত্রী সীতা রানী ও শ্যালক লিটন দাসকে আটক করে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের খুরুমখালী গ্রামের সুনীল দাসের ছেলে নরসুন্দর নয়ন দাস প্রেম করে গত ৮ বছর আগে একই বাড়ির দুলাল দাসের মেয়ে সীতা রানী দাসকে বিয়ে করে। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। অন্যদিকে নয়নের বড় ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী অজিত দাস বিগত প্রায় ৩ বছর আগে ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের হর্ণি দুর্গাপুর গ্রামের সাধু দাসের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দাসকে বিয়ে করে। বিয়ের পর অজিত দাস প্রবাসে চলে যাওয়ার পর দেবর নয়নের সাথে প্রিয়াঙ্কার পরকীয়া শুরু হয়। পরকীয়ার সূত্র ধরে নয়ন দাসের সাথে গত ৪ মে প্রিয়াঙ্কা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে পার্শ^বর্তী রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া এলাকায় আবুল মিয়ার ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। এক সপ্তাহ পর প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে নয়ন বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঁধ সাধে প্রিয়াঙ্কা। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এতে নয়ন দাস ক্ষিপ্ত হয়ে প্রিয়াঙ্কাকে রাখালিয়ার ভাড়া বাসায় রেখেই তার গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর সে প্রথমে ঢাকা ও পরে কক্সবাজারে আত্মগোপন করে।
অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা দাস পরকীয়া প্রেমিকের জন্য অপেক্ষার পর সে তার বাবার বাড়ি ফিরে আসে। এর কিছুদিন পর প্রিয়াঙ্কা পুনরায় মুঠো ফোনে নয়ন দাসের সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে কৌশলে গত ১৫ জুন রাতে তাকে প্রিয়াঙ্কার বাবার বাড়ি হর্নিদুর্গাপুর নিয়ে আসে। পরে সেখানে নয়নকে আটকে রেখে প্রিয়াঙ্কার গহনা উদ্ধারের চেষ্টা করে তার পরিবার। ব্যর্থ হয়ে তারা বুধবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে নয়নকে। এরপরে প্রিয়াঙ্কা দাস বাদী হয়ে বুধবার রাতে তাকে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে মামলা দায়ের করে। এই মামলায় পরকীয়া প্রেমিক নয়ন দাস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে নয়নের স্ত্রী সীতা রানী, শ্যালক লিটন দাস (২৪) এবং মামা আইনজীবী সহকারী পরেশ দাস (৪৫) কে।
অভিযুক্ত নয়ন দাস জানায়, প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর তারা বাড়িতে ফিরে আসলে তার পরিবারের লোকজন হয়তো বিষয়টি মেনে নিতো। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা রাজি না হওয়ায় বাক-বিতন্ডার একপর্যায়ে সে গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঐ গহনা সে কক্সবাজারে বিক্রি করে দেয় বলেও সে জানায়। অপরদিকে, খুরুমখালী গ্রামের লোকজন জানান, মাদকসেবী নয়ন দাসের অপকর্মের কারণে চারটি পরিবার তচনছ হওয়ার পথে। কারণ হিসেবে তারা জানান, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন দুই-তিনজনকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই প্রকৃত ঘটনাটি তদন্তপূর্বক অপরাধীদের বিচার দাবি করেন তারা।
এদিকে, মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযুক্ত নয়স দাস, তার স্ত্রী সীতা রানী ও শ্যালক লিটন দাসকে আটক করে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদ হোসেন জানান, অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আটকদের বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে তদন্তে তারা জড়িত না থাকলে অবশ্যই মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হবে।
২২ জুন, ২০২১।