মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষকের কারসাজি
এস এম সোহেল
ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর প্রবাসী মো. সাইফুল ইসলাম খন্দকারকে স্বপদে বহাল করার অভিযোগ উঠছে। বিদ্যালয়টির দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক কবির আহম্মদের সমঝোতায় মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সাইফুলকে স্বপদে বহালের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তার দেশে ফিরে আসার খবর পাওয়া গেছে।
কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে অন্য চাকরি করার বিষয়ে শিক্ষা বিভাগ কি ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে ম্যানেজ (অর্থের মাধ্যমে) করেই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম খন্দকার দেশের বাইরে গিয়েছে। সেখানে সে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র এক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে ইল্শেপাড়কে জানান, প্রধান শিক্ষক গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার পর প্রবাসী সাইফুলের সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে তিনি সাইফুলকে আশ্বস্ত করছেন- কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিসহ বিদ্যালয় উন্নয়ন ফান্ডে ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হলে তাকে স্বপদে বহাল করা হবে।
এদিকে সরকারি ঘোষণার এক মাসের বেশি সময় হয়েছে বিদ্যালয় খোলার। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর প্রবাসী সাইফুল কর্মস্থলে না থাকায় অফিসিয়ালি কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নিজেই অফিস সহকারীর রেকর্ড সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে। এ সুযোগে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ করছেন কর্মরত শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, ইউনিক আইডি করার জন্য বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা জেএসসি ও এসএসি সনদপত্র নেয়ার জন্য প্রতিদিন ভিড় করছে বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক নিজে সাবেক এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সনদপত্র বাবদ ৫শ’ টাকা করে আদায় করছেন। এ নিয়ে সনদ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের যেমন ক্ষোভ প্রকাশের খবর পাওয়া গেছে, তেমনি কর্মরত শিক্ষকরাও বিষয়টিকে সরাসরি দুর্নীতি বলে অভিযোগ করছেন।
বিদ্যালয়টির ঐ সিনিয়র শিক্ষকের অভিযোগ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউপউটার অপারেটর সাইফুল যেহেতু তথ্য গোপন করে প্রবাসে চলে গেছে, বিধিনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রধান শিক্ষক সেটা না করে উল্টো তার কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যা শিক্ষক হিসেবে তার ও প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষকদের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি আরো দাবি করেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাড. সেলিম উল্যাহ সেলিম এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মো. ইউনুছের আত্মীয় বিদ্যালয়ের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটোয়ারীর যোগসাজশেই এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির আহম্মদের সাথে একাধিকবার তার মোবাইলে (০১৭৬৮-৫৬৮৫৮৪) যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর ও ২৭ সেপ্টেম্বর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর প্রবাসী সাইফুলকে নিয়ে ইল্শেপাড়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সাইফুল করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে শ্রমিক হিসেবে প্রবাসে চলে যান। পরে বিদ্যালয়ের সভপতি ও প্রধান শিক্ষক সাইফুলকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সহায়তায় সাইফুলকে মেডিকেল ছুটি দেখায়। তখন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছিলেন- বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু দেড় মাস পেড়িয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে তারা বিষয়টির কোন সুরাহা তো দূরের কথা কোন ব্যবস্থাও নেননি। ফলে কয়েকমাস বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে গোপনে চাকরিতে যোগ দেয়ার সব ব্যবস্থা তারা সম্পন্ন করবেন বলে অনেকে মনে করছেন। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকার যেমন অপচয় হলো, তেমনি অনৈতিকতাও শিখলো অনেকে।
২৫ অক্টোবর, ২০২১।