ফরিদগঞ্জে ভূমি অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
ভূমি অফিসের পিয়ন হলেও স্থানীয় লোকজন তাকে দিনের বেলায় কখনোই অফিসে দেখেন না। কিন্তু নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাতের আঁধারে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি মুখ্য নয়। বড় অভিযোগ হলো, সে কখনো চাঁদপুর, কখনো ফরিদগঞ্জ আবার কখনো উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বসেই করেন জমা-খারিজের নামে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী লোকজন তার বিরুদ্ধে ভূমি অফিসে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানাতে শুরু করেছে। অভিযুক্ত আবুল কাশেম ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগে জানা যায়, আবুল কাশেম অধিকাংশ সময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি অফিস ও চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতার সুযোগে বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে কাগজপত্র সংক্রান্ত ব্যাপারে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। ইতোপূর্বে ফরিদগঞ্জ পৌর ও ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের লোকজনের কাছ থেকে অবৈধ টাকা লেনদেনের কারণে ২০২০ সালে তাকে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তার রমরমা বাণিজ্য থামেনি। সে কখনো নিজেকে বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদান করেন থাকে। গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মাসে ২/৩ দিন এসে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর করে উঠিয়ে নিচ্ছেন মাসিক বেতন-ভাতাদি।
ভুক্তভোগী ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের আবুল কালাম জানান, গত ২০ মার্চ তিনি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত বিগত বছরের ১৫ নভেম্বর তিনি পৌর ভূমি অফিসে গেলে, আবুল কাশেমের সাথে তা দেখা হয়। সে নিজেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং আমার জমির নামজারি খারিজ করার জন্য সে ৬ হাজার টাকা দাবি করে। তার কথায় আশ^স্ত হয়ে তাকে ৬ হাজার টাকা দেই।
১৫ দিন পরে আবুল কাশেম আমাকে মুঠো ফোনে জানায়, আমার জমির খাজনা বাকি। খাজনা পরিষদ করা ছাড়া নামজারি করা যাবে না। তখন সে খাজনার বকেয়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তার কথামগেত ৭ ডিসেম্বর অফিসের সামনে আমি তাকে ৫০ হাজার টাকা দেই, কিছুক্ষণ পরে সে আমাকে খাজনা দাখিলা কাগজ এনে দেয়। পরে বাড়ি এসে দাখিলাতে ১১ হাজার টাকা লেখা দেখে আমি তার কাছ থেকে বাকি টাকা দাবি করি। কিন্তু আবুল কাশেম বাকি টাকা আমি ফেরত দেবো বলে আজ পর্যন্ত আমাকে টাকা ফেরত দেয় নাই।
সম্প্রতি গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভূমি অফিসের অফিস সহকারী বিমলের কাছে আরো বেশকয়েকজন ভুক্তভোগী আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন। এদের কাছ থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমি নামজারি বাবদ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তাকে গত কয়েকদিন ধরে তারা খুঁজে পাচ্ছে না তারা।
ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় এলাকাবাসী জাানান, তাকে ৩ মাসের মধ্যে অফিসের আসে পাশেও দেখা যায়নি। মাসে ২/৩ বার গোপনে এসে পুরো মাসের হাজিরা খাতা স্বাক্ষর করে যায় সে।
অফিস সহায়ক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ থাকার কারণে তাকে অফিসে কাজ করতে দেই না। তার চাকরি আপনার ভূমি অফিসে, অফিসে না এসে কিভাবে সে বেতন উত্তোলন করে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে পৌর সহকারি ভূমি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, আমরা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেরেছি।
অভিুযোগের বিষয়ে আবুল কাশেমকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেরেছি, তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

২৮ মার্চ, ২০২৩।