রাত হলেই শুরু হয় বালু উত্তোলন
সাহেদ হোসেন দিপু
হাইমচর ও হিজলা সীমান্তবর্তী এলাকায় মাঝ নদীতে বালু উত্তোলনে সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। বালুখেকো নামে পরিচিত সেলিম খাঁন না থাকলেও তার হাল ধরে আছে বেশ কয়েকজনের একটি বালুখেকো সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হিজলা উপজেলার গাফফার তালুকদার, শরীয়তপুর উপজেলার সুমন বেপারী ও সম্রাটের নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন করে বলগেটে করে বালু উত্তোলন করছে। ১০ হাজার ঘনফুট বলগেটে বালু ভরতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। প্রতি বলগেট বালু ২০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যায় বলগেট কর্তৃপক্ষ। সারা রাতে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ সিন্ডিকেট। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ সিন্ডিকেটের লোকজন অবৈধভাবে ব্যবসা চালাতে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে না। নিজের মত করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বালু বিক্রি করছে তারা। হাইমচরের প্রশাসনের কাছে এটি তাদের সীমানার বাইরে হিজলা উপজেলা, অন্যদিকে হিজলা উপজেলার প্রশাসনের কাছে এটি তাদের সীমানার বাইরে হাইমচর উপজেলা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। কাচা টাকার লোভে বালু উত্তোলন বন্ধ না করে সহযোগিতা করছে হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। গত রোববার সারা রাত বালু উত্তোলন করে এ সিন্ডিকেট। হাইমচরের সীমানার প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বালু উত্তোলন করা হয়। বালুভর্তি বলগেটগুলো হাইমচরের সীমানা দিয়েই পার হয়। কিন্তু হাইমচরের নীলকমল নৌ-পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন বলগেট ধরতে সক্ষম হয়নি। গতকাল সন্ধ্যায় বালু উত্তোলনের প্রস্তুতির সংবাদ পাওয়া যায়। এ নিয়ে লোক মুখে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
নীলকমল ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, সেলিম চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে বালু কাটার ফলে নীলকমল ইউনিয়ন নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। যে বালু কাটার জন্য সেলিম চেয়ারম্যান অপরাধী হয়ে তার মৃত্যু হলো। তার মৃত্যুর পরও বন্ধ হয়নি সেই বালু উত্তোলন। তাহলে সেলিম চেয়ারম্যানের অপরাধ ছিল কী? যদি তার সেই অবৈধ কাজ চলমান থাকে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউপি সদস্য জানান, হাইমচরের সাহেবগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকা ও হিজলা এলাকার বর্ডারের নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সে বালু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ বালু কাটার চক্রটি রাতের অন্ধকারে কখনো হাইমচরের সীমানায় আবার কখনো হিজলা সীমানায় বালু উত্তোলন করে। তারা এক সাথে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজ সীমানার বাহিরের অজুহাতে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কী হাইমচরের সীমানার বাহিরে বালু উত্তোলন বৈধ? তা নাহলে নীলকমল নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, কোস্টগার্ড, প্রশাসন কারোইতো কোন পদক্ষেপ দেখছি না। কয়েকদিন যাবত বালু কাটছে- সবাই কেমন যেন নীরব ভূমিকা পালন করছে!
নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনির শিকদার বলেন, হাইমচরে হোক আর হিজলায় হোক- বালু উত্তোলন করছে, এটা সঠিক। নদীতে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। বালুখেকো সিন্ডিকেট বালু কাটার সময় ৩টি স্পীটবোটে নদীতে মহড়া দেয়। যাতে কোন লোক তাদের ড্রেজিংয়ের কাছে না যেতে পারে। কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ একত্রে যৌথ অভিযান দিলে বালুখেকো চক্রগুলোকে স্টাফসহ আটক করতে পারবে। প্রশাসনের লোকজন আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। চরাঞ্চল রক্ষায় যে কোন মূল্যে বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, আমি নীলকম নৌ-পুলিশ ফাঁড়িকে বলেছি নদীতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য। তিনি আমাকে জানিয়েছেন হাইমচরের সীমানার ৫ কিলোমিটার দূরে বালু উত্তোলন করছে। যেহেতু বলগেটগুলো হাইমচরের সীমানা দিয়ে চলাচল করে তাই আমি তাদের বালুভর্তি বলগেটগুলো আটক করতে বলেছি। এ বালু কাটার পিছনে অনেক বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে।
নীলকমল নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কংকন কুমার বিশ্বাসের সরকারি মোবাইল নম্বরে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫।