আজ মরহুম আ. করিম পাটওয়ারীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব সাবেক গণপরিষদের সদস্য ও চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি চাঁদপুরের বৃহত্তর আওয়ামী পরিবারের একজন নির্মোহ নিরহস্কার অভিভাবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০০০ সালের এইদিন ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে আব্দুল করিম পাটওয়ারী চাঁদপুর শহরের তালতলাস্থল নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেইদিন বিকেল ৫টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুরের স্মরণাতীতকালের এ বিশাল জানাজা শেষে তাঁর বাড়ির সামনে পাটোয়ারী বাড়ি মসজিদের দক্ষিণ পাশে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল করিম পাটোয়ারী সব রাজনীতিক দলের নেতা-কর্মী এবং চাঁদপুরবাসীর কাছে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে ভিড় করে। সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া।
মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ এবং সমাজসেবক। চাঁদপুর পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করতে তাঁর চিন্তা-চিতনা ও পরিকল্পনা ছিলো অতুলনীয়। সেজন্যে চাঁদপুরবাসী এখনো তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আসছে। তিনি মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও সুস্পষ্টভাবে তাঁর ছেলেদের বলে গেছেন ‘কষ্ট হলেও সৎ থাকার চেষ্টা করো’ যা তাঁর কবরের পাশে লাগানো নামফলকে এখনো লিপিবদ্ধ রয়েছে।
পারিবারিক কর্মসূচি : আজ মঙ্গলবার মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তালতলাস্থল পাটওয়ারী বাড়িতে পারিবারিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল থেকে কোরআন খতম বাদ আছর পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল। এতে সর্বস্তরের জনসাধারণকে উপস্থিত থাকার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানিয়েছেন মরহুমের বড় ছেলে আলহাজ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।
উল্লেখ্য, মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী পিতার নাম মরহুম রৌশন আলী পাটওয়ারী নিবাসী তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি চাঁদপুর। তার জন্ম ১৯২৫, মৃত্যু ২১ জানুয়ারি ২০০০ সালে। তার মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। পাকিস্তান শাসনামলে তিনি ছিলেন বিডি মেম্বার ও এমপিএ,১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন সংগ্রাম পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশকালীন দায়িত্ব, স্বাধীনতা উত্তর চাঁদপুর মহকুমার অস্থায়ী প্রশাসক ও প্রধান বিচারপতি, এমসিএ, তৎকালীন মহকুমার রিলিফ ও ফুড কমিটির সভাপতি, চাঁদপুর পৌরসভার দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান (১৯৭৩-১৯৮২) ছিলেন। সামাজিক প্রতিনিধি সাবেক মহাকুমা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা রেড কিসেন সোসাইটি আজীবন সদস্য ও কার্যকরী কমিটির সদস্য, চাঁদপুর ডায়াবেটিক সমিতির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, চাঁদপুর মাজারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের চীফ ওয়ার্ডেন, চাঁদপুর জেলা কারাগারের অস্থায়ী পরিদর্শক, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সদস্য, কচি-কাঁচার মেলা চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বিষ্ণুদী আজিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, বাসস্ট্যান্ড মসজিদে গোর-এ গরিবাঁ-এর প্রতিষ্ঠাতা, চাঁদপুর আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসান এর পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা (১৯৬৮)। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যোগদান, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে, আওয়ামী লীগের যোগদান এবং দীর্ঘদিন চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, ভাষা আন্দোলনে চাঁদপুরে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন।

২১ জানুয়ারি, ২০২৫।