নোমান হেসেন আখন্দ
শাহরাস্তিতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও গেজেটে নাম না উঠায় মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের গেজেট ভাতার বিষয়টি নানা জটিলতায় ঝুলে থাকা বর্তমানে ১৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা দুঃখে-কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করেন।
সুবিধা ও ভাতাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বর্তমানে উপজেলায় ভাতা স্থগিত ৩৪ জন, সনদধারী ১৯ জন ও অনলাইনে আবেদনকারী ১শ’ ২৮ জনসহ ১শ’ ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ৩৪ জনের ভাতা স্থগিত রয়েছে। ২০১৭ সালে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক ১শ’ ৮১ জনের তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। পুনরায় ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাতা স্থগিত ও সনদধারি ৫৩ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন পুনরায় যাচাই করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সে প্রতিবেদন পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতায় তাঁরা গেজেটভূক্ত হতে পারছেন না। ইতোমধ্যে এঁদের মধ্যে কেউ-কেউ মারা গেছেন। অনেকেই মৃত্যুশয্যায়। যারা বেঁচে আছেন তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তাঁরা সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
খনেশ্বর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আমাদের বাছাইয়ের তালিকা না পাঠানোয় আমরা ভাতা বঞ্চিত হয়ে দূর্বিষহ জীবন যাপন করছি। কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতায় ভাতা না পেয়ে অনেক দুঃখে কষ্টে দিনাতিপাত করছি। অনেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর পরিধেয় শাড়ি পর্যন্ত ছিড়ে গেছে। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ আজ আমরাই অসহায়।
কুলশী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হাশেম জানান, বর্তমানে আমি দৃষ্টিহীনতায় ভুগছি। ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের তালিকা জামুকাতে পাঠানো হচ্ছেনা। সেটা কেন? কিজন্য? আমাদের কি অপরাধ? সেটার প্রতিকার চাই।
উঘারিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা একেএম ফজলুল হক জানান, আমরা সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কেন অবহেলিত সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রায়শ্রী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. মমতাজউদ্দিন জানান, ভাতা বন্ধ- একথা লজ্জায় কাউকে বলতে পারছি না। বিষয়টি নিজের স্ত্রী-সন্তানদের কাছে পর্যন্ত লুকাতে হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি লজ্জিত ও বিব্রত।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, বিভিন্ন জটিলতায় এই মুক্তিযুদ্ধারা ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত রয়েছে। ঝুলে থাকা বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে পরিবারগুলো উপকৃত হতো।
১৬ মে, ২০২২।