সর্বস্ব লুট, আতঙ্কে চালক ও যাত্রীরা
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
একসময় কচুয়া-সাচার-গৌরিপুর সড়ক ডাকাতির স্থান, আর যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন চালকদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে পরিচিতি ছিলো। সময়ের ব্যবধানে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ডাকাতি কিছুটা কমলেও গত ৫ আগস্টের পর আবারো বেড়েছে। এর মধ্যে ডাকাতির নতুন স্থান হিসেবে যোগ হয়েছে হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়ক।
সম্প্রতি একে একে তিনটি ঘটনায় যানবাহন থামিয়ে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে গাড়ি ভাংচুর করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকেও হয়েছে লুট। আর একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কে যাত্রী ও চালকদের কাছে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে যারা লুটের শিকার হয়েছেন তারা সবাই প্রবাসী। সবশেষ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরে আমেরিকা প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম লিটন (৪৫) ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মজুপুর কাজী বাড়ির খোরশেদ আলমের ছেলে। তিনি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দেশে এসে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
তিনি ও তার সত্তরোর্ধ্ব বয়সি মা নুরজাহান বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বহনকারী হাইস গাড়িটি যখন হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের হাজীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের কাজীরগাঁও উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে আসে, তখন পিকআপ যোগে আসা ডাকাতরা গাড়িটির গতিরোধ করে।
এসময় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে গাড়িটি ভাংচুর, চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে ১০ ভরি স্বর্ণলাংকার, ৩০ হাজার ইউএস ডলার ও বাংলাদেশী কিছু নগদ টাকাসহ ৫০ লাখের বেশি টাকার মালামাল নিয়ে যায়। আমেরিকা প্রবাসীর সাথে থাকা খোরশেদ আলমের ছোট ভাই সাইফুল আলম মুঠোফোনে সংবাদকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে একই সড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মকিমাবাদ তাকওয়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতেরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় চালককে মারধর ও গাড়ি ভাংচুর করে ওমরা ফেরত ৩ যাত্রীর একটি নতুন ল্যাপটপসহ তিনটি ট্রলিব্যাগ নিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ওমরা যাত্রীরা হলেন- লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরপাগলা গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মাহবুবুর রহমান, তার মা ও স্ত্রী। ওই সময়ে তারা সংবাদকর্মীদের জানান, একটি পিকআপ গাড়িটি কচুয়া থেকেই তাদের ফলো করছিলো। তবে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
এর কিছুদিন আগে হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের কাজীরগাঁও-বদরপুর ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় (মডেল মসজিদের পূর্বদিকে) একটি সিএনজিচালিত স্কুটার (সিএনজি) গতিরোধ করে কামাল হোসেন ও আব্দুল জলিল নামের বিদেশগামী দুই যাত্রীকে জিম্মি ও তাদের মারধর করে নগদ প্রায় ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাসহ সিএনজি চালক সজিব জানান, একটি মোটরসাইকেলের পাশে দাঁড়ানো তিনজন ব্যক্তি টার্গেট লাইট আলো দিয়ে তাদের সিএনজি গতিরোধ করেন। এরমধ্যে একজন পুলিশি পোশাক পরিহিত ও অস্ত্রধারী ছিলেন। পরে সিএনজি থামালে তারা যাত্রীদের তল্লাশি ও মারধর করে নগদ প্রায় ৮০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, তারা টার্গেট লাইট দিয়ে আমাকে গাড়ি থামাতে ইশারা করে। এসময় আমি গাড়ি শ্লো করি এবং একজনের পরনে পুলিশের পোশাক ও হাতে রাইফেল দেখে গাড়ি থামাই। এসময় তারা যাত্রীদের তল্লাশি করে জোরপূর্বক টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। বাঁধা দিলে তারা যাত্রীদের মারধর করে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে কচুয়া-সাচার-গৌরিপুর সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৫ আগস্টের পর থেকে হাজীগঞ্জ এলাকায় হচ্ছে। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীরা ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘ঝামেলা এড়াতে’ মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না।
কথা হয় কয়েকজন সিএনজি চালক ও স্থানীয়দের সাথে। তারা জানান, প্রায় সময় এ রকম ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনি। তবে আগে মাঝে-মধ্যেও শুনলেও, এখন প্রায় দিনই চুরি-ছিনতাই কথা শুনতে পাচ্ছি। তাদের দাবি, পুলিশি টহল জোরদার এবং বিভিন্ন স্পটে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হোক। এতে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া সহজ হবে।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, বড় ধরনের ডাকাতি কিংবা ছিনতাই হলে পুলিশ, সাংবাদিকরা জানে। কিন্তু ছোট-খাটো ঘটনা হলে কেউ জানে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীরা ভয়ে মামলা-মোকদ্দমার ভয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তারা সবাই নিরাপত্তা চান।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টির আমরা তদন্ত করছি। এর আগের দুইটি ঘটনায় কেউ (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা) লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।