২৫ পৌরসভায় ভোট ২৮ ডিসেম্বর

মনোনয়নপত্র দাখিল ১ ডিসেম্বর, যাচাই ৩ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহার ১০ ডিসেম্বর * মেয়র পদে দলীয় ও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট

প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা

শুরু হল সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভায় আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১ ডিসেম্বর ও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৩ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১০ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১১ ডিসেম্বর।

এরপরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে শুরু হল নির্বাচনী লড়াই। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব এ নির্বাচনে পড়বে বলে শঙ্কা রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা রোববার সন্ধ্যায় তফসিল সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করেন। এরপরই সন্ধ্যায় ৫টা ৪০ মিনিটে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর নির্বাচন ভবনে তফসিল ঘোষণা করেন।

এর মধ্য দিয়ে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হল। ইসির সিনিয়র সচিব জানিয়েছেন, এবার ৪-৫ ধাপে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ২৫টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ভোট আয়োজন নিয়ে চিন্তা করছে না ইসি।

ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন পৌরসভা এলাকায় ব্যানার ও পোস্টারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে আসছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রকাশ্যে চলছে জোর তৎপরতা। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক রূপ নিল।

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় ও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। তবে মেয়র পদে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যাবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে ৩২৯টির মধ্যে ২৫৯টি পৌরসভা নির্বাচন উপযোগী রয়েছে।

এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৫টি ও মার্চে ২৮টি মোট ২২৪টির পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হবে। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আরও ৩০টির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বিধান রয়েছে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন বিবেচনা করে প্রথম ধাপে ২৫টির তফসিল ঘোষণা করা হল। বাকিগুলো ধাপে ধাপে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে মামলা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে ৩২৯টির মধ্যে অন্তত ৪৩টি পৌরসভায় এই মুহূর্তে নির্বাচন করতে পারছে না ইসি।

যদিও এর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একই দিনে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন ২২১টির ফল প্রকাশ করা হয়। ওই সময়ে বেসরকারিভাবে প্রকাশিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের ১৭৬ জন ও বিএনপির ১৯ মেয়র নির্বাচিত হন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৭ জন, বিএনপির ২ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন ও স্বতন্ত্র ৬ জন মেয়র পদে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বেশ কয়েকজন মেয়র প্রার্থী। নির্বাচনে অনিয়মের কারণে একটি পৌরসভার নির্বাচন বাতিল ও চারটির ফল স্থগিত ছিল। সেগুলোতে পরে নির্বাচন হয়।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একই দিনে ২৩৪টিতে ভোট হলেও এবার ৪-৫ ধাপে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, গতবার ইভিএমে ভোট হয়নি।

এবার চেষ্টা চলছে যতদূর সম্ভব ইভিএমে ভোট করার। এছাড়া কিছু পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয় রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কম সংখ্যক পৌরসভা নিয়ে সুন্দরভাবে ভোট করা ভালো।

কত ধাপে নির্বাচন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ধাপের সংখ্যা বলা কঠিন। তবে ৪-৫ ধাপ লাগবে। চেষ্টা করব যত কম ধাপে করা যায়। কারণ কোনো কোনো পৌরসভা নির্বাচন নানা রকম জটিলতা থাকতে পারে।

কোনো পৌরসভার মেয়াদ দুই বছর পর শেষ হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্চ, এপ্রিল বা জুনের মধ্যে যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর নির্বাচন মার্চের মধ্যে করা হবে। কোন ধাপে কতটির নির্বাচন হবে তার সঠিক ভাগ এখনও করা হয়নি।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, ধারণা তো ধারণা, আশঙ্কা তো আশঙ্কা। এটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন চায়।

নির্বাচন কমিশন জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করছে। তিনি বলেন, আমেরিকা, ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশে নির্বাচন হয়েছে। করোনার কারণে কোনো দেশে বড় আকারের নির্বাচন বন্ধ নেই। কতদিন করোনাভাইরাস থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

নির্বাচন জীবনের একটা অংশ। রাজনীতির অন্যতম উপাদান। এটাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র চলতে পারে না। ইভিএমে সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধে ভোট দেয়ার আগে ও পরে স্যানিটাইজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

যে ২৫ পৌরসভায় ভোট : ২৮ ডিসেম্বর যে ২৫ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, গাজীপুরের শ্রীপুর, সুনামগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।

ইসির সিনিয়র সচিব জানান, নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর আপিল কর্তৃপক্ষ হবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। তবে খোকসা পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে।

কমিশন সভা ছাড়াই তফসিল : জানা গেছে, সাধারণ বড় আকারের নির্বাচনের তফসিল কমিশন সভা করে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু সেই প্রথা ভেঙে তফসিল ফাইলে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ১৭ অথবা ২৫ নভেম্বরের তফসিল ঘোষণার দুটি প্রস্তাব দিয়ে গত সপ্তাহে ফাইল কমিশনে তোলা হয়।

ওই ফাইল অনুমোদনের জন্য নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর দফতরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষমাণ ছিল। রোববার বাকি চার কমিশনার ফাইল অনুমোদনের পর তফসিল ঘোষণা করা হল।

এ নির্বাচনে সব কটি পৌরসভায় ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ওই ফাইলে ভিন্নমত দেন দুই কমিশনার। এছাড়া নতুন করে পৌরসভার নাম অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবও করেন এক কমিশনার। তবে বেশিরভাগ কমিশনারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করা হল।