চাঁদপুর আঞ্চলিক অফিসে পৌনে ৪ লাখ পাসপোর্ট ইস্যু

এক দশকে ১শ’ ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন ও অনলাইনে ছবি তোলার দৃশ্য। -ইল্শেপাড়



ইল্শেপাড় রিপোর্ট
দেশ-বিদেশে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত জরুরি পাসপোর্ট বা আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। তবে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ভ্রমণের জন্য নয় কেবল নিজ দরকারেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। যাতে করে শ্রমিক হিসেবে বিশ্বের যে কোন দেশেই কাজের সন্ধানে যেতে পারেন তারা। আর এ পাসপোর্ট করার জন্য তাদের নির্ধারিত হারে রাজস্ব দিতে হয় সরকারকে। পাশাপাশি লাগে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট। এ দুটো কাজ হয়ে গেলেই মিলে যায় কাক্সিক্ষত পাসপোর্ট। এদিকে চাঁদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যক্রম সেবা চালু হয় ২০১০ সাল থেকে।
চাঁদপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে সেবা গ্রহিতারা ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। এতে করে গত এক দশকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১শ’ ১০ কোটি টাকা। জেলা আঞ্চলিক অফিসের পরিসংখ্যান মতে প্রতিদিন গড়ে ২শ’ নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন। আঞ্চলিক অফিসটি গত এক দশক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সেবা দিয়ে আসছিলো সেবা প্রত্যাশীদের। বর্তমানে অফিসটি ই-পাসপোর্টে কার্যক্রম চালু করবে বলে জানা গেছে।
তবে সরকারের আন্তরিকতায় চাঁদপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু হলেও সেবা প্রত্যাশীদের কাক্সিক্ষত সেবা মিলেনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। দালাল সিন্ডিকেট আর অবৈধ ঘুষের কারবার ছাড়া সেবা প্রত্যাশীরা এ অফিস থেকে রাজস্ব (পাসপোর্ট ফি) প্রদান করে তেমন সরকারি সেবা পাননি কর্তা ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। বর্তমানে সেই পরিবেশ কিছুটা বদলিয়েছে বলে জানিয়েছে সেবা প্রত্যাশীরা।
এদিকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে খ্যাত এ জেলার প্রায় ৩০ শতাংশ (পুরুষ) প্রবাসী বলে জানা গেছে। ফলে প্রতিনিয়তই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটিতে সেবা গ্রহিতাদের ভিড় লেগেই থাকেই। শহরতলীর ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কে অবস্থিত অফিসটি বর্তমানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) ক্যামেরা দ্বারা নিয়ত্রিত। ফলে আগের মতো দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য নেই। তবে তিন তলা বিশিষ্ট অফিসটির সম্মুখভাগের পরিবেশে অনেক সুন্দর। ফলে সেবাগ্রহিতার এখানে এসে একটু বাড়তি বিনোদনও পায়।
শহরের অদূরে হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে ফুল, ফলের বাগানে সাজানো অফিসটির কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতির। ফলে দ্রুত পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও ভোগান্তিমুক্ত সেবা প্রদান করার কারণে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি অনেকটাই সুনাম অর্জন করেছে সর্বসাধারণের।
সেবার মান ও সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তাজ বিল্লাহ্ ইলশেপাড়কে জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার ২০১০ সাল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করেছে। চলিত বছরেই সরকার ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করেছে। তবে শুরু থেকে চাঁদপুর অফিস থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার পাসপোর্ট ইতোমধ্যে ইস্যু করা হয়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্ব খাতে আয় হয়েছে ১শ’ ১০ কোটি টাকা।
তিনি আরো জানান, আবেদনকারীরা অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। এছাড়া এখানে রয়েছে সুপেয় পানি ও বসার ব্যবস্থা। নেই কোন দালালের উৎপাত। সেবা প্রত্যাশীদের জন্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পাসপোর্টের আবেদন ফরম দেয়া হয়।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, বর্তমানে সহকারী পরিচালক পদে ১ জন, উপ-সহকারী পরিচালক পদে ১ জন, সুপারিন্টেডেন্ট পদে ১ জন, অফিস সহকারী পদে ৪ জনের মধ্যে ৩ জন, রেকর্ড কিপার পদে ১ জন, নাইটগার্ড পদে ১ জন, অফিস সহায়ক পদে ১ জন ও পরিছন্নকর্মী পদে ১ জন কর্মরত রয়েছেন। আর উচ্চমান সহকারী পদের ২ জন এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদটি শূন্য রয়েছে।
আবেদনকারী ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর-দুঃখিয়া ইউনিয়নের ফখরুল কবির, কচুয়া উপজেলার উজানী এলাকার নজরুল ইসলম বলেন, নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি, আশা করি সঠিক সময়ে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাব। মতলব উত্তর উপজেলার খন্দকার কান্দি এলাকার নিজাম উদ্দিন বলেন, হজ করার জন্য পাসপোর্টের আবেদন করছি। ছবি ও আগুলের ছাপের কাজ শেষ করলাম, ঝামেলা ছাড়াই।
নতুন পাসপোর্ট হাতে পেয়ে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন সরকার জানান, বিদেশে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছি। আজ নতুন পাসপোর্ট হাতে পেলাম সঠিক সময়ে। কোন বাড়তি টাকা দিতে হয়নি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবা কক্ষগুলো হলো : নিচতলার ১০১নং কক্ষ- আবেদন জমা ও তথ্য প্রদান। ১০২নং কক্ষ- ডকুমেন্ট স্ক্যান, ১০৩নং কক্ষ- বায়ো এনরোলমেন্ট, ১০৪নং কক্ষ- সার্ভার রুম, ১০৫নং কক্ষ- প্রি-এনরোলমেন্ট, ১০৭নং কক্ষ- পাসপোর্ট বিতরণ ও অনুসন্ধান কেন্দ্র।
দ্বিতীয় তলায় ২০১নং কক্ষ- সহকারী পরিচালক, ২০২নং কক্ষ- হিসাব কক্ষ, ২০৩নং কক্ষ- উপ-সহকরী পরিচালক, ২০৪নং কক্ষ- নামাজের স্থান, ২০৭নং কক্ষ-সভাকক্ষ, ২০৮নং কক্ষ- প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা এবং ২০৯নং কক্ষ- ডেসপাস শাখা।
বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে যাতায়াতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে একটি পরিদপ্তর হিসেবে বর্তমান ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৬টি কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিদপ্তর থেকে অধিদপ্তর হয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ২০১০ সালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (আইসিএও) এর গাইড লাইনের মাধ্যমে সরকার এমআরপি এবং এমআরভি প্রদান শুরু করে। পাশাপাশি স্থাপিত হয় ১৯টি নিজস্ব ভবন সৃজিত হয় ৬টি ভিসা ও ৯ ইমিগ্রেশন চেকপোর্ট। ২০১১ সালে আরও ৩৩টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মিত হয় বিভিন্ন জেলায়।