আজ থেকে লকডাউনের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় চাঁদপুর

করোনা রোগী প্রতিদিনই শনাক্তের নতুন রেকর্ড

ইলশেপাড় রিপোর্ট
সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে। শনিবারে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে রোববার ৭ হাজার ৮৭ জন আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আজ থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গত মার্চ মাস থেকেই করোনা শনাক্তের রেকর্ড যেন থামছে না। যার ফলে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। হাসপাতালগুলোতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে আইসিইউসহ অক্সিজেন সরবরাহের।
লকডাউন কার্যকরের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে চাঁদপুরের সর্বসাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ বলছে, করোনা প্রতিরোধে সরকারের সব পদক্ষেপেই তাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু সব ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ করায় অতি প্রয়োজনীয় যোগাযোগ যেমন ব্যহত হবে তেমনি যানবাহনের চালক ও শ্রমিকদের সংসারের চাকা কিভাবে চলবে তা নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের মাঝে রয়েছে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সংক্রমণরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন। তবে আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) নবনির্মিত বহুতলবিশিষ্ট কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি সচল রাখতে হবে, তবে জীবনটা আগে। কারণ জীবন যদি না বাঁচে, তাহলে অর্থনীতিই কী আর রাজনীতিই কী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দিলেও আমরা অর্থনীতির গতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।
তবে গত বছরের মতো স্থায়ীভাবে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না। কেবল দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ করা হচ্ছে। ফলে চাঁদপুরে অটো কিংবা ক্ষুদ্র যানবাহনের চালকদের মাঝে কমবেশি স্বস্তি বিরাজ করতে দেখে গেছে। ক্ষুদ্র যানবাহনের চালকরা দাবি করছে, মূলত এবারের লকডাউনে সরকার চাচ্ছে যাতে করে অতি প্রয়োজন না হলে, সর্বসাধারণ যেন ঘর থেকে বের না হন। তবে তা কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে চালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষে মাঝে সংশয় কিংবা সন্দেহ থাকছে।
কারণ হিসেবে অনেকেই বলছে, দেশের সাধারণ মানুষ মূলত নিয়ম মেনে চলতে অভ্যস্ত নয়। যার ফলে লকডাউনে ব্যবসায়ীরাই সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষ কাজের সন্ধানে কিংবা অলস সময় পার করার জন্য ঘরের বাইরে আসবে। আর এসব পাবলিককে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কত সময় পর্যন্ত নিয়মের মাঝে রাখতে পারবে- তা’ই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে সরকার লকডাউনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করছেন ঃ
১. সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌপথে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন ও উৎপাদন ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী ও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দর কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবার জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
৩. সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস-আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়েজনীয় জনবল নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা নেওয়া করতে পারবে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণকার্য চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্প-কারখানা এলাকার নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়া যাবে না।
৬. শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং অন্য কোনো শহরে যেতে পারবে না।
৭. কাঁচা বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
০৫ এপ্রিল, ২০২১।