ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌ-পুলিশের মতবিনিময় সভা

ঈদে ফিটনেসহীন লঞ্চ চলাচল করা যাবে না
……মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন

আল আমিন ছৈয়াল
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌ-পথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের সেবা নিশ্চিতে নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের আয়োজনে মতবিনিময় সভা হয়েছে। বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল ১১টায় চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দীন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ঈদের সময় নদীতে নৌকা দিয়ে যাত্রী উঠানো যাবে না। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বেশি ১ জন যাত্রী নেয়া যাবে না। কোনভাবেই ফিটনেসহীন লঞ্চ চলাচল করা যাবে না। আপনাদের গাফিলতিতে একটি দুর্ঘটনা ঘটলে আপনাকে পাবে না, তার দায়-দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। অপরাধ আপনারা করবেন, গালি কেন আমরা খাবো? নদী রক্ষায় কোনোভাবেই ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলতে পারবেন না। লঞ্চে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ঝুড়ি বাধ্যতামূলক রাখতে হবে। আজ আমি ঈদ উপলক্ষে আপনাদের কাছে দু’টি ইস্যু নিয়ে এসেছি- একটি হলো সেবা, অন্যটি হলো নিরাপত্তা। যাত্রীদের সেবার সাথে এখানে যারা আছেন সবাই জড়িত। সিডিউলের সাথে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সম্পৃক্ত আছেন। তারা নদীতে কাজ করে এবং উপরেও কাজ করে। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরাও আমাদের কাছে একটা পার্ট।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চাঁদপুরে আসে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যুগে। তার সাথে আপনার একদিনের এই সাক্ষাৎ। সে যদি বলে চাঁদপুরে সেবার মান ভালো না, তাহলে আমাদের বদনাম। সে ধরে নেবে চাঁদপুরে এভাবেই সারা বছর সেবার মান চলে। ঈদের আগে এবং পরে যেসব লঞ্চগুলো চলাচল করবে মালিক পক্ষের সাথে বসে আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কোন লঞ্চ চলাচল করবে। তার তথ্য আমাকে জানাবেন। ফিটনেস নেই এমন লঞ্চকে চলাচল করতে আমরা দেব না। আপনাদের মনে আছে গত কয়েক বছর আগে নারায়নগঞ্জের একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল, পরে জানা গেছে সেটির ফিটনেস ছিল না। এমন ফিটনেসহীন লঞ্চ চলবে না সেটা আমাকে নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের সময় লঞ্চে কোন ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। ঈদের আগের ৫ দিন ও পরের ৫ দিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
চাঁদপুর অঞ্চল নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, লঞ্চে পলিথিন মোড়ানো খাবার বিক্রি সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ থাকবে। যাত্রীরা যদি খাবার সঙ্গে নিয়ে আসেন তবে যেন কোনোভাবেই ব্যবহৃত পলিথিন নদীতে না ফেলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। যাত্রীদের জোরপূর্বক লঞ্চে ওঠানোর জন্য টানা-হেঁচড়া করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। প্রত্যেক যাত্রী নিজ সুবিধামত লঞ্চে উঠবেন। লঞ্চের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা নির্ধারিত পার্কিং এলাকায় অবস্থান করবেন এবং যাত্রীদের টানাটানি করা থেকে বিরত থাকবেন। কোনো অবস্থাতেই সিএনজি বা অটোরিকশা চালকরা পল্টন পর্যন্ত যাত্রী নিতে পারবেন না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট অনুসারে ভাড়া গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুততম সময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে লাইসেন্স গ্রহণে সহানুভূতির আহ্বান জানান তিনি। শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন এবং পুলিশের কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। প্রতিটি লঞ্চে নামাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী লঞ্চ পরিচালনা করতে হবে। ২০ রমজান থেকে ঈদের কার্যক্রম শুরু হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইমতিয়াজ আহমেদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. মো. ফজলুল হক, চাঁদপুর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ একেএমএস ইকবাল হোসেন, বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক উপ-পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য, মালিক প্রতিনিধি মো. রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ।

২০ মার্চ, ২০২৫।