খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন

নোমান হোসেন আখন্দ
শাহরাস্তির খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির মানসিক ভারসাম্যহীন (মেয়ে) শিক্ষার্থীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দপুর ১টা পর্যন্ত রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক খিলাবাজারÑচিতোষী আঞ্চলিক সড়কের উপর টেবিল বেঞ্চ বসিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এসময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যাওয়া শত শত লোক ভোগান্তির শিকার হয়, কেউ পায়ে হেটে, কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা মালামাল নিয়ে অপেক্ষা করে অবস্থান করেছেন। দপুর ২টায় শাহরাস্তি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খায়রুল আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সাথে বসে, দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
খিলাবাজার স্বুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম (রোল- ৭১), পিতা নজরুল ইসলাম, মাতা মুকছুদা বেগম, গ্রাম- ভেরকী, মজুমদার বাড়ী। সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। তারপর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরন-মারধর, ইট পাটকেল ছোড়া, থুথু নিক্ষেপ, বই, কাগজ-কলম ছিনিয়ে নেয়া। শিক্ষক ও ছাত্রদের জড়িয়ে ধরে মারধর, হাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয়া, পরনের কাপড় টেনে-হিছড়ে ছিড়ে ফেলা, প্রেমের প্রস্তাব দেয়া, বিয়ের প্রস্তাব দেয়া, উচ্ছশৃংঙ্খল আচরণ করা, বিভিন্ন ক্লাস কক্ষে ঢুকে শিক্ষকদের পাঠদানে বাধা, গালমন্দ, ব্যাগ নিয়ে টানাহেচড়াঁ, শিক্ষকদের ক্লাস থেকে বের করে দেয়া। বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকান থেকে মালামাল নিয়ে আসা, গালমন্দ করা, দোকানদারদের মারধর করা।
এসব বিষয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দ তার অভিবাভকদের সাথে বেশ কয়েকবার আলাপ-আলোচনা বৈঠক করা হলে ও তারা ঐ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার অজুহাতে কালক্ষেপণ করছেন। তার অস¦াভাবিক এ আচরণে এ প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, ৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মানসম্মান আজ হুমকীর সম্মুখীন। গত ১৪ মার্চ মানসিক ভারসাম্যহীন শিক্ষাথী জান্নাতুল নাঈম নিঝুম, বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশে অংশ নেয়। কিছুক্ষন পর তার চাচা এসে তাকে নিয়ে যায়। দুপুর ২টায় এ শিক্ষার্থী তার শ্রেনীকক্ষের সামনে গিয়ে শিক্ষকের কাছে ক্লাসে ঢুকার অনুমতি চায়। শিক্ষক কাউছার আলম তাকে ক্লাসে ঢুকতে না দেয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে গালমন্দ ও উদ্ভট আচরন করেন।
বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাহবুব আলম, ডা. মাহফুজুর রহমানকে জানানো হয়। সদস্যরা বিষয়টি তার অভিবাভককে জানানোর জন্য বললে, তার বাবা প্রবাসী হওয়ায় বিধায় তার মাকে বিষয়টি অবহিত করি। তার মা বলেন দয়া করে নিঝুমকে একটি সিএনজি যোগে পাঠিয়ে দেন। তার মা আরো জানায়, সে বাড়ী থেকে আসতে আমাকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে এসেছে। তার মায়ের অনুরোধে শিক্ষার্থী নিঝুমকে বিদ্যালয়ের আয়া মায়া রাণীর মাধ্যমে বাড়ীতে পৌছানো হয়। আয়া মায়া রাণীর ভাষ্যমতে, নিঝুমের মা নিঝুমকে ঐ দিন বেদম মারধর করে।
তিনি আরো জানান, তার মায়ের এ মারধরের ঘটনা একটি কুচক্রীমহল ভিন্নদিকে প্রবাহিত করে শিক্ষক কাউছার আলম ও মজিবুর রহমানের উপর দোষ ফেলছেন। শিক্ষকরা তাকে বেদম মারধর করেছেন মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ ও করেছেন।
তিনি বলেন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও মানসিক বিকারগ্রস্ত, অসুস্থ তার অস্বাভাবিক আচরনের কারণে গভনিং বর্ডির অধিবেশন নং ০৬/২৩ তাং ৩১/০১/২০২৩ ইং তাকে বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ১৬/০২/২৩ ইং অভিবাভকের নিকট নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর পরিবার ও স্থানীয় কিছু মামলাবাজের ইন্ধনে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার আলম ও মজিবুর রহমান সহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ২/ ৩টি নারী নির্যাতনের মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে ঐ শিক্ষকরা বিজ্ঞ আদালতের আদেশে জামিনে রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও মানসিক ভারসাম্যহীন শিক্ষার্থীর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান। নচেৎ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাহবুব আলম জানান, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন। তার বিষয়ে অনেক বৈঠক করা হয়েছে। তার অভিভাবকরা তাকে বারবার চিকিৎসার কথা বলে কোন সুরাহা করেননি। পরবর্তীতে আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেয়া এ শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি পক্ষ মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারে নেমেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এ প্রাণপ্রিয় শিক্ষকরা অত্যন্ত সুনাম দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। এ শিক্ষকদের চরিত্র নিয়ে টালবাহানা করছেন। যাহা দুঃখজনক পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ।
শিক্ষক কাউছার আলম জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই মানসিক বিকৃত নিঝুমের ক্লাস শিক্ষক আমি। প্রতিনিয়তই তার বেফাঁস প্রস্তাব, শিক্ষাথীদের সাথে গালমন্দ অসাদাচারন সবাই অতিষ্ঠ্য হয়ে পড়েছে। ১১ জুলাই সে ক্লাসে ঢুকে আমার পরিধেয় জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয় ও ক্লাসের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমন করে আহত করে।
এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন রায়শ্রী দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান ডা. আবদুর রাজ্জাক, খিলা বাজার স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোশারফ মিয়া, পরিচালনা পর্যদের সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মেম্বার, ইউপি সদস্য কতুবউদ্দিন সোহাগ প্রমুখ।

১৩ জুলাই, ২০২৩।